গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস || Healthy Pre Pregnancy Diet in Bengali
প্রেগন্যান্সির পর আমাদের মা ঠাকুমারা বলেন এটা খাও সন্তান সুস্থ হবে,ওটা খেওনা তোমার জন্য ভাল না। কিন্তু আপনি যখন প্রেগন্যান্ট হওয়ার চেষ্টা করছেন তখন কি আপনার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কোন দারকার আছে? নিশ্চয়ই আছে।প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই যদি শরীরের যত্ন নেওয়া যায় ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা হয় তাহলে তা আগত সন্তানের জন্য অবশ্যই ভাল ফলদায়ক হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ(Healthy pre pregnancy diet Indian in Bengali) আপনার সন্তান ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে ও বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস প্রেগন্যান্সির পর সন্তানের বিভিন্ন জন্মগত রোগ যেমন স্পাইনা বিফিডা (Spaina bifida এক ধরনের জন্মগত ত্রূটি যার ফলে মেরুদণ্ড সঠিক ভাবে গঠন হয়না) প্রতিরোধ করে। তাছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবন শৈলি আপনার আগত ৯ মাসের সময়কে আরো সুন্দর করে তোলে।তাহলে চলুন দেখেনি কি ধরনের খাওয়ার ও কোন কোন খাওয়ার আপনাকে দৈনিক খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে(Foods to eat when you are trying to get pregnant in Bangla)।
ফলিক অ্যাসিড(must include Folic acid in your pre pregnancy diet chart to prevent infertility)
ফলিক অ্যাসিড হল একধরনের B ভিটামিন(ভিটামিন B-9) যা হবু মায়েদের প্রেগন্যান্সির আগে থেকে শুরু করে শেষ অবধি অবশ্যই খেতে হবে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর মায়ের জানতে জানতে প্রায় ৪ সপ্তাহ লেগে যায়, আর প্রথম ৪ সপ্তাহেই ভ্রূণের প্রাথমিক গঠনের সময় ফলিক অ্যাসিড সবচেয়ে বেশী জরুরী হয়। কারন বেশিরভাগ জন্মগত ত্রূটি এই প্রথম কয়েক সপ্তাহেই তৈরি হয়ে থাকে। তাই মায়ের শরীরে যদি আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড যথেষ্ট পরিমান মজুত না থাকে তাহলে ভ্রূণের গঠনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ মেয়েদের সন্তান ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে ও বন্ধ্যাত্বের হার হ্রাস করতে পারে।যখন আপনি সন্তান ধারনের চেষ্টা করছেন তার অন্তত ২ মাস আগে থেকে রোজ আপনাকে ৪০০mcg ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে( তার আগে আপনি আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন)।
উৎস (Food source of folic acid that may help you to get pregnant)
ডাল জাতিয় খাদ্য- ছোলা,মুগ,মটর, রাজমা ডাল, চানা ডাল ইত্যাদি
সবুজ শাক সবজি- পালং শাক , ব্রকলি, বীট, শতমূলী, অ্যাভকাডো ইত্যাদি
বাদাম-চিনে বাদাম, আখরোট, ফ্লাক্স সিড, পেস্তা বাদাম,আমন্ড বাদাম , সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি
ডিম,পেপে,কলা, দুধ, ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমানে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে।
টক জাতিয় ফল- কমলা লেবু, মৌসুমি লেবু, টক লেবু, বেরি, স্ত্রবেরি ইত্যাদি।
ফাইবার (Include more fiber in your diet when you are trying to get pregnant)
প্রেগন্যান্সির পূর্বে ওজন নিয়ন্ত্রন রাখা খুবই জারুরি। ফাইবার আপনার ওজন নিয়ন্ত্রন রেখে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়।ফাইবার হল একধরনের উদ্ভিজ শর্করা (plant based carbohydrate)যা আমদের শরীরে সহজে হজম হয়না বা ধীরে ধীরে হজম হয় ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সহজে নির্গত হয়।এছাড়া ফাইবার রক্ত শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে সন্তান ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে(You must control your blood sugar if you want a healthy pregnancy)।যখন আপনি গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন তখন প্রতিদিন অন্তত ১০ গ্রাম বেশি ফাইবার গ্রহণ করুন। কারন আপনি গর্ভবতী হলে এই ফাইবার যুক্ত খাওয়ার আপনার গর্ভকালীন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রন করবে।
উৎস(Source of fiber enriched foods to eat to get pregnant in bangla)
দানা শস্য-বাদামি ভাত, বাদামী পাউরুটি, দালিয়া, কুইনোয়া,
সবুজ শাক সব্জি- পালং, মটর, ভুট্টা, ব্রকোলি ইত্যাদি
ফল- কলা, আপেল, বেরি, কমলালেবু
ডাল- ছোলা, গোটা মুগ, মুসুর ডাল, রাজমা ডাল
আরো পড়ুন ১২ টি খাদ্য যেগুলি সন্তান ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও গর্ভবতী হতে সাহায্য করে।
ফ্যাটি অ্যাসিড (Essential fatty acid is must needed nutrient that may increase your fertility)
গর্ভধারণের জন্য ওমেগা 3 ও ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। এই দুই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিস্কের ও বুদ্ধির বিকাশে সহায়তা করে।তাই আগে থেকে এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে মজুত থাকা জরুরী। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড ডিম্বাণু নিঃসরণ কারী হরমনের ভারসাম্য বজায় রেখে সন্তান ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।তাই এখনই ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (যা ভাজা খাওয়ার, খাসি মাংস,মিষ্টি রোল, বিস্কুট , কেক, কুকিজ, চিপস ইত্যাদি তে প্রচুর রয়েছে )যুক্ত খওয়ার বাদ দেওয়ার সময় কারন ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাওয়ার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে। তার জায়গায় স্বাস্থ্যকর খাওয়ার যাতে শরীরের অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে সেই সব খাওয়ার খাওয়া উচিৎ।
উৎস(Sources of fatty acid enriched food that may boost your fertility)
আমিষ উৎস- ডিম, সামুদ্রিক মাছ ও মিষ্টি জলের চর্বি যুক্ত মাছ। তবে সামুদ্রিক মাছ বেশি খাবেন না এতে পারদের পরিমান বেশি থাকে যা গর্ভধারণের জন্য ভাল না।
নিরামিষ উৎস- আখরোট, চিয়া সীড, ফ্ল্যাক্স সিড,অ্যাভোকাডো সয়াবিন(খুবই অল্প পরিমানে খাবেন ,অতিরিক্ত সোয়া খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে)।
প্রোটিন(Include more plant based protein in your diet plan to get pregnant naturally )
শরীরের গঠনের জন্য প্রোটিন কতটা জরুরী সেটা আমরা সবাই জানি।প্রোটিন আপনার আগত সন্তান কে প্রয়োজনীয় পরিপোষক সরবরাহ করে। যেহেতু আপনি গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করছেন তাই মনে রাখবেন প্রাণীজ প্রোটিনের থেকে উদ্ভিজ প্রোটিন গ্রহণ করা বেশী উপযোগী।আপনি যদি প্রাণীজ প্রোটিনের তুলনায় উদ্ভিজ প্রোটিন বেশী খান তাহলে এই উদ্ভিজ প্রোটিন আপনার মাসিক চক্রিকা সঠিক সময় মত হতে সাহায্য করবে ও সন্তান ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
উৎস(Best protein enriched foods to eat to get pregnant)
প্রাণীজ প্রোটিন- ডিম, মাছ, মুরগির মাংস। মুরগির মাংস খেলেও অল্প পরিমানে খাবেন।
উদ্ভিজ প্রোটিন- বিভিন্ন ডাল যেমন গোটা মুগ, মুসুর, ছোলার ডাল, রাজমা ডাল, চানা ডাল,মাশরুম,
দুধ ও দুগ্ধ জাত খাদ্য- দুধ, দই, পনির, ছানা, ঘি, মাখন, চীজ ইত্যাদি প্রোটিনের গুরুত্ব পূর্ণ উৎস।
ক্যালসিয়াম(Calcium is a essential element that may help you to get conceive)
ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্ব পূর্ণ খনিজ যা আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।আপনি যখন সন্তান ধারনের জন্য চেষ্টা করছেন তখন আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমানে ক্যালসিয়াম মজুত থাকা জরুরী।কারন যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে যখনই আপনি গর্ভবতী হবেন আপনার শরীর আপনার হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে বর্ধিত ভ্রূণে সরবরাহ করবে ফলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমান আরো কমে যাবে।যার ফল সরূপ ভবিষ্যতে অস্টিওপোরোসিস রোগ(যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়) হতে পারে।এছাড়া ক্যালসিয়াম প্রজনন তন্ত্র কে সুস্থ ভাবে কাজ করতে সহায়তা করে দ্রুত সন্তান ধারনে সাহায্য করে।
উৎস(Sources of Calcium enriched food that you should take when trying to get pregnant )
দুধ ও দুগ্ধ জাত খাদ্য-দুগ্ধ জাত খাদ্য যেমন দুধ, দই, পনির, চীজ, ঘি ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভাল উৎস
সবুজ শাক সব্জি- ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়শ
এছাড়া সয়াবিন,আমন্ড, ছোলা, তিল, সূর্যমুখী বীজ, কাঁটা যুক্ত মাছ ইত্যাদি
আয়রন(Iron is an essential nutrient that may help you to get pregnant )
আয়রন আমাদের শরীরে অক্সিজেন ধারন ক্ষমতা বাড়ায়।আয়রনের ঘাটতি রক্তাল্পতার মত রোগ ডেকে আনতে পারে। যেসব মেয়েদের শরীরে আয়রন সঠিক মাত্রায় থাকে তাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের তুলনায় বেশী হয়। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর যদি আপনার দেহে অক্সিজেন কম থাকে তাহলে শিশুর শরীরেও অক্সিজেন কম পৌঁছবে।ফলে শিশুর বৃদ্ধি বিঘ্নিত হতে পারে এবং সময়ের আগে শিশুর জন্মাবার(Premature birth) সম্ভাবনা বেড়ে যায়।মনে রাখবেন হেম আয়রনের তুলনায় নন হেম আয়রন গ্রহণ করা সন্তান ধারনের ক্ষেত্রে অনেক বেশী উপকারী।
উৎস(Sources of iron enriched food that you should eat to boost your fertility)
প্রাণীজ উৎস-মুরগির মাংস, ডিম ইত্যাদি হেম আয়রনের (প্রাণীজ খাদ্য থেকে পাওয়া আয়রন) উৎস।
উদ্ভিজ উৎস- পালং শাক, ডাল, ছোলা, আমন্ড, সবুজ মটর,বীট, খেজুর, কলা ইত্যাদি
আয়োডিন(Including Iodine enriched food in your balanced diet may help you to get pregnant)
যেহেতু আপনি গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন তাই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরী। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করে। আয়োডিনের ঘাটতির ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের স্বল্প ক্ষরণ ) রোগ হয়।থাইরয়েডের সমস্যা আপনার ঋতু চক্রকে ব্যাহত করতে পারে বা থামিয়ে দিতে পারে। যার ফল সরূপ ডিম্বাণু নিঃসরণ, ভ্রূণের ধারন ও রোপণ এই সব কিছুতে সমস্যা দেখা দেবে। আর এই সব অসুবিধে আপনার গর্ভধারনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
উৎস(Sources of Iodine enriched food that may help you to conceive by controlling thyroid hormone)
আয়োডিন যুক্ত নুন – যে খাওয়ার নুন আপনি ব্যবহার করেন তার লেবেলে দেখে নেবেন যে আয়োডিন দেওয়া আছে কিনা।
এছাড়া দুধ, দই, চিজ, ডিম, সিম বীজ, খোসা সহ আলু সেঁকা বা পোড়া (Baked potato),চিংড়ি, ইতাদি আয়োডিনের গুরুত্ব পূর্ণ উৎস।
sources: https://fertilityinstitute.com/folic-acid-for-fertility/
https://www.whattoexpect.com/getting-pregnant/health-and-wellness/foods-to-enjoy/prepregnancy-diet.aspx
অনলাইন শপ গলুতে প্রাপ্ত চিয়া সিড গলুর মান কেমন হবে? অথবা ভালো কুয়ালিটির টা কোথায় পাব ?
অনলাইনে অর্গ্যানিক চিয়া সিড কিনে ট্রাই করতে পারেন।