৯ মাস বয়সী শিশুর খাবার মেনু ।। 9 months old baby food menu in Bengali.

৯ মাস বয়সী শিশুর খাবার মেনু ।। 9 months old baby food menu in Bengali.

৯ মাস বয়সি শিশুর খাদ্য তালিকা

৯ মাস বয়সে এসে আপনার শিশু আর পুরোনো ধরনের খাবার খেতে চায়না। সে এখন খাবারের  স্বাদ খুব ভালো ভাবে বুঝতে শিখছে। তাই তার খাওয়ার কে আরো মজাদার ও স্বাদ যুক্ত করে তুলতে হবে। শিশুর খাবার  মানেই বোরিং স্বাদ হীন সেদ্ধ  খাবার হতে হবে তার কোনো মানে নেই। খাবারে সামান্য  মসলা যোগ করে কিংবা বিভিন্ন রংএর খাওয়ার  দিয়ে তাকে খাওয়ারের প্রতি আকর্ষণ করতে হবে।

শিশুদের এই সময় স্বাদ কোরক গুলি উন্নত হতে থাকে ফলে স্বাদ ভালো না লাগলে বা খাওয়ারের টেক্সচার ভালো না লাগলে খেতেই চায়না বা খাবার মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়। ফলে নতুন বাবা মায়ের কাছে শিশুকে খাওয়ানো খুব কঠিন কাজ হয়ে পড়ে। তবে চিন্তা করার কিছু নেই। আপনাকে বিভিন্ন উপায় বার বার চেষ্টা করে দেখতে হবে যে কোন ধরনের খাবার সে খেতে পছন্দ করে। ৯ মাসের শিশুর খাবার রেসিপি ৮ মাসের তুলনায় একটু আলাদা।বাচ্চা কে খাবারের টেক্সচার চেঞ্জ করে খাওয়াতে হবে। এখন থেকে তাকে আর খাবার পেস্ট করে বা পিউরি করে খাওয়াবেন না। তার চেয়ে বরং হাতে চটকে বা স্ম্যাশ করে খাওয়ান। অনেক  শিশু এই সময়  নিজের  হাতে খেতে আগ্রহ দেখায়।  আপনার শিশুও এরকম করলে তাকে ডিসকারেজ করবেন না। হাতে ধরে খেতে দিন। শিশু যদি বাড়ির সাধারণ রান্না খেতে চায় তাহলেও অল্প স্বল্প তার মুখে দিন। এতে সে নতুন স্বাদ বুঝতে শিখবে।

খাওয়ানোর আগে কিছু কথা মনে রাখুন (Some tips before you go to 9 month baby food chart in bengali)

  • শিশুকে ব্রেস্ট মিল্ক বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
  • শিশুর খাওয়ানোর সব পাত্র জীবাণু মুক্ত করেই খাওয়াবেন।চেষ্টা করবেন স্টিল এর পাত্র ব্যাবহার করতে।

  • শিশুকে বাড়িতে রান্না করা খাবারই খাওয়াবেন।
  • বাইরে থেকে কোনো কেনা খাওয়ার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার , চিপস ,কেনা পানীয় , চকোলেট এই সব খাওয়াবেন না।
  • শিশুর ১ বছর বয়সের আগে শিশুর খাবারে  নুন ,চিনি, মধু  মেশাবেন না।
  • শিশুর বয়স ১ বছর না হওয়া অব্ধি গরুর দুধ খাওয়াবেন না।
  • খাওয়ানোর সময় টিভি দেখিয়ে বা মোবাইলে কার্টুন দেখিয়ে খাওয়াবেন না। এতে সে এভাবেই খেতে অভস্থ্য হয়ে পড়বে। টিভি বা মোবাইল না চললে আর খেতে চাইবে না।
  • শিশুকে সবসময় একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা চেয়ারে বসিয়ে খাওয়াবেন।এতে টেবিল ম্যানার শিখবে। বাচ্চাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খাওয়ানো অভ্যাস করবেন না। তার চেয়ে বরং গান গেয়ে বা মুখ ভঙ্গি করে বা খেলনা দিয়ে বসিয়ে খাওয়ান।

  • বাড়ির সাধারণ রান্না বা আপনি যা খাচ্ছেন তা খেতে চাইলে অল্প স্বল্প দিতে পারেন। কিন্তু সেটা যেন অবশ্যই শিশুর খাবার যোগ্য হয়। অতিরিক্ত ঝাল বা তেলমসলা যুক্ত খাবার যেন না হয়।
  • শিশু হাতে ধরে খেতে চাইলে খেতে দিন , কিন্তু খাওয়ার দিয়ে চলে যাবেন না ,সবসময় লক্ষ্য রাখুন।
  • যে কোনো নতুন খাবার দেওয়ার পর ৩ দিন অপেক্ষা করুন।খাবারে এলার্জি থাকলে তা বুঝতে ৩ দিন সময় লাগে।লুজ মোশন , কোষ্ঠ্যকাঠিন্য , র‍্যাশ, অতিরিক্ত সর্দি  বা পেটে ব্যথা এই জাতীয় যদি কোনো এলার্জির লক্ষণ দেখতে পান তাহলে সাথে সাথে সেই খাবার বন্ধ করে দিন। কিছুদিন পরে আবার ট্রাই করে দেখুন। যদি এলার্জি একদমই না কমে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুন শিশুদের কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

  • যেহেতু এই সময় কঠিন খাবারের পরিমান বাড়তে থাকে ফলে শিশুর শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। তার তৃস্নার দিকে লক্ষ্য রাখুন।শিশুকে প্রয়োজন মতো  পরিমান  মতো জল খাওয়াবেন।

৯ মাসের বেবি ফুড রেসিপিতে কোন কোন খাবার আপনি যোগ করতে পারবেন (Foods to be added in your 9 month old baby food menu)

প্রথমেই দেখে নিন কোন কোন খাবার আপনি আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারবেন।কিন্তু তার আগে দেখুন আমাদের ৮ মাসের শিশুর খাদ্য তালিকা। যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে কোন কোন খাবার আপনি অলরেডি যোগ করে ফেলেছেন। 
 
ফল 
আপেল, কলা, নাশপাতি,অ্যাভকাডো,খেজুর, আম, স্ত্রবেরি, সবেদা পেঁপে,তরমুজ, কমলালেবু ,ডাবের জল ,কিউই ,বেদানা, মোসাম্বি লেবু ,আনারস, আঙুর।
 
শাকসবজি 
গাজর, কুমড়ো ,মটর, বিন্স ,আলু ,মিষ্টি আলু, ব্রকলি, ফুলকপি, টমেটো, বীট,পালং শাক ,ব্রকলি ,বাঁধাকপি ,লাউ ,ক্যাপসিকাম ,চিচিঙ্গা ,বেগুন, ওলকপি।

ডাল ও দানা শস্য
চাল,সুজি, রাগি ,বার্লি, ওটস, সাবুদানা ,মুড়ি,কুইনোয়া ,মুসুর ডাল, মুগ ডাল ,দালিয়া, ছোলা, চিড়ে, আটা।
 
দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য 
ঘি ,পনীর ,দই ,চীজ , বাটার।
আমিষ
মাছ ,ডিমের কুসুম, মুরগির মাংস।
মসলা
হলুদ, জিরে, ধনে, মৌরি ,জোয়ান ,হিং(খুবই সামান্য পরিমানে) ,দারুচিনি ,এলাচ, ধনেপাতা ,কারিপাতা ,পুদিনা পাতা, সর্ষে ,মেথি, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ,লবঙ্গ (সব মশলাই খুব সামান্য পরিমানে ব্যাবহার করবেন)। 
 
9 maser bacchar khabar talika

 

 

 

প্রতিদিন কতটা পরিমান খাবার খাওয়াবেন (Everyday how much food you can give to your 9 months old baby)

প্রতিদিন কতটা বাচ্চা কে খাওয়াবেন তা বাচ্চার খিদের ওপর নির্ভর করে। প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে এর পরিমান  আলাদা হয় । এমনকি প্রতিদিন ওর খাবার পরিমানে পরিবর্তন হতে পারে। ওর খিদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। নিচে শিশুকে প্রতিদিন কতটা খাওয়াবেন তার একটা রাফ আইডিয়া দেওয়া হলো। শিশুর খিদে অনুযায়ী এর পরিমান বাড়তে বা কমতে পারে(৯ মাসের শিশুর খাদ্য তালিকা )।

সকাল ৯ টা(Breakfast) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ।

দুপুর ১২ টা – ১/৪ কাপ।

দুপুর ১.৩০ টা(Lunch) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ।

বিকেল ৫ টা -১/৪ কাপ।

রাত্রি ৮ টা(Dinner) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ।

আরো পড়ুন শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়

প্রতিদিন কোন ধরনের খাদ্য কতটা খাওয়াবেন (How much quantity of each food category you can give to your 9 months baby per day)

ফল -৩/৪ থেকে ১ কাপ।

দানা শস্য -১/২ কাপ থেকে ৩/৪ কাপ।

শাকসবজি -৩/৪ থেকে ১ কাপ।

দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য – ১/৪ কাপ থেকে ১/৩ কাপ।

আমিষ – ১/৪ কাপ থেকে ১/৩ কাপ

মশলা – খুবই সামান্য পরিমানে।

আরো পড়ুন খুব সহজেই স্ট্রেচ মার্কস থেকে মুক্তি পান। 

৯ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকার সময় নির্ঘণ্ট (9 month old baby food chart in Bengali )

সপ্তাহের সাত দিন প্রত্যেক সপ্তাহে  ৯ মাসের শিশুর খাবারের তালিকা কেমন হবে তার একটা নমুনা চার্ট দেয়া হলো।
প্ৰথম  সপ্তাহের খাবার অনেকটা ৮ মাসের খাবারের মতো ,কিন্তু পরিমানে একটু বেশি। স্বাদে বিভিন্নতা আনার জন্য খাবারে মসলা যোগ করুন।সাধারণ ওটসের ছিলার পরিবর্তে মুগ ডাল  বা চিড়ের ছিলা খাওয়াতে পারেন। সাধারণ রাইসের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস খাওয়াতে পারেন। প্রতিদিনকার খবরে প্রোটিন জাতীয় খাবার অবশ্যই রাখবেন।
9 maser bacchar khabar talika

আরো পড়ুন ১২ টি খাদ্য যেগুলি সন্তান ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও গর্ভবতী হতে সাহায্য করে

এই সপ্তাহে স্বাদের  পরিবর্তনের জন্য পানির পোলাও বা ডিমের কুসুম দিয়ে পোলাও খাওয়াতে পারেন। নতুন সবজির মধ্যে বেগুন যোগ করতে পারেন। বেগুন সেদ্ধ বা ভাজা করে খাওয়াতে পারেন। অনেক শিশুর বেগুনে এলার্জি  হয় সেদিকে নজর রাখবেন।  সকালের স্ন্যাক খাওয়ানোর সময় ফলের ছোট টুকরো বা ব্রেডের টুকরো ওর হাতে দিন , যাতে ও  হাতে ধরে খেতে পারে (Introduce finger food to your baby.) খেতে  গিয়ে হয়তো ফেলে দেবে কিন্তু অধৈর্য না হয়ে  ওকে এনকারেজ করবেন।

৯ মাসের শিশুর বেবি ফুড রেসিপি
তৃতীয়  সপ্তাহে আপনি বাচ্চাকে মুরগির মাংস খাওয়াতে শুরু করতে পারেন।  চিকেন সেদ্ধ করে বা সবজি দিয়ে চিকেন  স্টূ করে খাওয়াতে পারেন। সর্বদা খেয়াল রাখবেন চিকেন যেন খুব ভালো করে সেদ্ধ  ও নরম  হয়। ছাতুর শরবৎ বা ছানার শরবৎ করে খাওয়াতে পারেন। কেনা ছানা  বা পনিরের পরিবর্তে  বাড়িতে তৈরি ছানা বা পানির খাওয়ান। 

চতুর্থ সপ্তাহে এসে আপনি বাড়িতে যা রান্না হয় তাই মোটামুটি খাওয়াতে পারেন কিন্তু অবশ্যই তা যেন  অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত না হয়। হালকা যে কোনো সবজি ,পাঁচ মেশালি তরকারি, মাছের পাতলা ঝোল এই সবই বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।

 

শেষ কথা (Conclusion)

৯ মাস বয়সে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ও শারীরিক বিকাশ দ্রুত হতে থাকে।এই সময় শিশুর বিভিন্ন মাইলফলক গুলি যেমন নিজে থেকে বসতে পারা , হামাগুড়ি দেওয়া , আওয়াজ শুনে বস্তূর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মাথা ঘোরানো ইত্যাদি অর্জন করেছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। এখন থেকে বাচ্চাকে  খাওয়ার পেস্ট করে খাওয়ানো একদম বন্ধ করেদিন। খাবার একটু দানাদার যেন হয় তাতে ও চিবিয়ে খেতে শিখবে।         
এই প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে ও কাজে লেগে থাকে তাহলে এখনই অন্য বাবা মায়েদের সাথে শেয়ার করুন। আর আপনার মতামত, সাজেশান বা কিছু প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে আমাদের জানান। 
 
 
image credit -designed by master1305/freepik 

Recommended Articles

2 Comments

  1. নাসির জাহান সিকদার

    আমার বাচ্চার আজকে আট মাস শেষ হলো,আগামীকাল থেকে নয়মাস বয়স শুরু হবে তাই আপনাদের সাজেশন গুলো পড়েছি বেশ ভালো লেগেছে আর এভাবে নতুন পোস্ট পেলে অনেক উপকৃত হবো! ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

    1. আপনাকে উপকৃত করতে পেরে আমি খুশি। আপনাদের এই প্রশংসা আমাকে আরো নতুন কিছু লিখতে উৎসাহিত করে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.