থাইরয়েড রোগীদের খাবার তালিকা || Diet chart for thyroid patient in Bengali
বর্তমানে ভারতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে হাইপোথাইরোয়েডে আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। বিভিন্ন কারণে থাইরয়েড রোগ হতে পারে যেমন আয়োডিনের অভাব ,থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ (inflamation in thyroid gland), অটো ইমিউন ডিজিজ (Autoimmune disease) ইত্যাদি। তবে এসবের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই এই রোগের কারণ হিসেবে দেখা গেছে থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ।
আমাদের গলায় থাকা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ করে। এই ক্ষরণের পরিমান বেশি বা কম হলে হাইপো থাইরোয়েড বা হাইপার থাইরয়েড রোগ হয়। আজ যে বিষয় তা নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো হাইপোথাইরোয়েড বা যেটাকে আমরা সোজা ভাষায় বলি মোটা হওয়ার থাইরয়েড। আমি নিজে এই রোগে ভুগেছি কারণ আমার এক ধরনের অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার রয়েছে।কিন্তু এখন আমি লিফস্টাইল ও ডায়েট চেঞ্জএর মাধ্যমে আমার অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার ও হাইপোথাইরোয়েডকে রিভার্সে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। পুরো আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে পড়ুন আশাকরি উপকৃত হবেন।
কিভাবে বা কোন ডায়েট করে বা কি লিফস্টাইল চেঞ্জ করে আমি থাইরয়েড কে রিভার্সে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি তাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। কিন্তু মনে রাখবেন যে কোনো ডায়েট ফলো বা চেঞ্জ করার আগে আপনার নিউট্রিশনিস্ট এর সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নেবেন।
সবার আগে বলে রাখি যে ডায়েট ই ফলো করুন না কেন ,রেজাল্ট পেতে কিন্তু সময় লাগবে। স্ট্রীক্টলী সবকিছু ফলো করলে আশাকরি ৬ মাসের মধ্যে কিছু ভালো পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। আপনি যদি নর্মাল কনভেনশনাল মেডিসিন খেয়ে সুস্থ আছেন ও তাতে আপনি স্যাটিসফাএড তাহলে তাই কন্টিনিউ করুন। কিন্তু যদি চান যে হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট আপনি খাচ্ছেন তার ডোজ কমাতে ও ন্যাচারাল উপায়ে থাইরয়েড কন্ট্রোলে আনতে তাহলে ডায়েট ও লাইফস্টাইল চেঞ্জ করুন।
হাইপোথাইরোয়েডিজম রোগীর নিষিদ্ধ খাবার(Foods to avoid for Thyroid Patient)
চলুন দেখে নিই কি কি খাবার আপনি রোজকার ডায়েট থেকে বাদ দেবেন।
দুধ ও দুগ্দ্ধ জাতীয় প্রোডাক্ট(Say no to Milk Product if you have hypothyroid)
আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন এটা ভেবে যে দুধের মত স্বাস্থকর ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটা জিনিস কি করে আপনার থাইরয়েডের জন্য খারাপ হতে পারে। দুধের মধ্যে থাকা প্রোটিন ও ল্যাকটোজ আমাদের শরীরে প্রদাহ(inflammation) বৃদ্ধি করে। আমাদের শরীরে ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি পেলে এন্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু এই এন্টিবডি গুলি দুধের প্রোটিনগুলি কে শনাক্ত করতে পারেনা ,তার বদলে নিজের শরীরের হেলদি থাইরয়েড কোষ গুলিকে আক্রমণ করে ও নষ্ট করে ফেলে। তাই দুধের তৈরি কোনো প্রোডাক্ট যেমন দই ,চীজ ,মাখন,পনীর ,ছানা বা দুধের মিষ্টি, আইসক্রিম ইত্যাদি একটুও খাবেন না।
গ্লুটেন জাতীয় খাবার(No Gluten if you have thyroid)
গ্লুটেন জাতীয় খাবার মানে গম,বার্লি ইত্যাদি থেকে তৈরী খাবার যেমন আটা ,ময়দা,দালিয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। দুধের মতো গ্লুটেনও আমাদের শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা শেষমেষ থাইরয়েড ও অন্যান্য লাইফস্টাইল ডিজিজ কে বাড়িয়ে তোলে। রাতে যদি রুটি,পরোটা খাওয়ার অভ্যেস থাকে তো আজই বন্ধ করুন। তার পরিবর্তে বাদামী ভাত (Brown rice) ,কুইনোয়া(Quinoa) ইত্যাদি খান।
প্রসেসেড ফুড ও প্যাকেটজাত খাদ্য(No more Processed Food for Thyroid Patient )
প্রসেসেড ফুড ও প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন চিপস ,কুকিজ ,পিজ্জা,বার্গারের মত যেকোনো খাবার যাদের টেস্টি বানানোর জন্য আর্টিফিশিয়াল জিনিস মেশানো হয় সব কিছু বন্ধ করুন। এর সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস বা রঙিন পানীয় সব কিছুই খাওয়া বন্ধ রাখুন। তাছাড়া এই সব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি যা শরীরে অতিরিক্ত ইন্সুলিন সৃষ্টি করে। থাইরয়েডের মত যে কোনো ইনফ্লামেটরি রোগের ক্ষেত্রে এই সব খাবার থেকে দূরে থাকাই উচিৎ।
ক্যাফিনেটেড ড্রিংকস (No Caffeine)
যে সব পানীয়ের মধ্যে ক্যাফিন থাকে যেমন চা ,কফি ,গ্রীন টি ,কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি আমাদের অন্ত্রে ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করে। যার ফল সরূপ শেষপর্যন্ত থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি হয়।
অ্যালকোহল(Say no to Alcohol for betterment of Thyroid)
অ্যালকোহল শরীরে ইনফ্লামেশন তৈরী করে আমরা সবাই জানি।অ্যালকোহল লিভারের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বিঘ্নিত করে ইমিউন সিস্টেম কে দুর্বল করে তোলে। লিভারে অ্যালকোহল ভাঙনের পর যে সব টক্সিক পদার্থ তৈরী হয় তারা ইনফ্লামেশন তৈরী করে ও শেষ পর্যন্ত থাইরয়েডের ক্ষতি করে। তাই অ্যালকোহল সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
আর্টিফিশিয়াল সুইটনার(No Artificial Sweetener)
অনেকেই যারা ডায়েট করেন তারা চিনির পরিবর্তে আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ব্যাবহার করেন। চিনি অবশ্যই খারাপ কিন্তু তার চেও বেশি খারাপ আর্টিফিশিয়াল সুইটনার। এই সব কৃত্রিম মিষ্টি বিশেষ করে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কোষ গুলিকে নষ্ট করে থাইরয়েডের ক্ষরণকে ব্যাহত করে ।
গয়ট্রোজেন(No Raw Goitrogens if you have hypothyroidism )
গয়ট্রোজেন হলো একধরনের পদার্থ যা আমাদের থাইরয়েডের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে নষ্ট করে। যেসব খাবারে গয়ট্রোজেন পাওয়া যায় তারা হলো
- কিছু সবজি যেমন বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,ওলকপি,ব্রকোলি ,পালং ইত্যাদি।
- সোয়া,টোফু।
- মিলেট যেমন বাজরা,জোয়ার ইত্যাদি।
- কিছু ফল ও স্টার্চ যুক্ত সবজি যেমন সাবুদানা,ক্যাসাভা,মিষ্টি আলু,স্ট্রবেরি,পীচ ফল ইত্যাদি।
কিন্তু মনে রাখবেন এই সব খাদ্যকে আপনার ডায়েট থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেবেন না। নাহলে আপনার ডায়েট অনেক বেশি রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাবে,অনেক কিছু পুষ্টি গুন থেকেও বঞ্চিত হবেন।যা আপনার অটো ইমিউন রোগ কে আরো খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। কারণ এই সব খাদ্য আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে ও শরীর থেকে টক্সিক ও দূষিত পদার্থ রেচনের মাধ্যমে নির্গত করতেও সাহায্য করে।
গয়ট্রোজেন জাতীয় খাদ্যকে সবসময় ভালো করে সেদ্ধ করে খাবেন। এই সব খাদ্য তখনই শুধুমাত্র সমস্যা সৃষ্টি করে যখন কাঁচা খাওয়া হয়। তাপের সংস্পর্শে এলে গয়ট্রোজেন পদার্থটি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই সব খাবার ভালো করে রান্না করে খেতে কোনো অসুবিধে নেই।
সুস্থ থাইরয়েডের জন্য যে ধরণের খাবার ডায়েটে যোগ করবেন (Foods to eat for healthy Thyroid Function in Bengali)
আয়োডিন (Iodine food for healthy thyroid)
থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকলাপের জন্য আয়োডিন একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল।শরীরে আয়োডিনের অভাব থাকযে হাইপোথাইরোয়েডিজম এর চান্স বেড়ে যায়। যে কোনো সামুদ্রিক খাদ্য যেমন সামুদ্রিক মাছ । আয়োডিনের সবচেয়ে ভালো উৎস হোলো আয়োডিন যুক্ত সামুদ্রিক লবন(Iodized Sea Salt)। তবে অতিরিক্ত লবন খাবেন না ,নাহলে অন্য ধরনের রোগ প্রেশার, হার্ট প্রব্লেম ইত্যাদি হতে পারে।তাছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত আয়োডিন শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। হাফ চামচ আয়োডিন যুক্ত লবন আপনার সারাদিনের প্রয়োজনীয় আয়োডিনের যোগান দিতে পারে।
জিঙ্ক (Eat Foods which are rich in Zinc for Thyroid health)
জিঙ্কআমাদের শরীরকে থাইরয়েড হরমোন রিলিজ করতে সাহায্য করে ও হরমোনগুলোকে বিশেষ করে TSH কে রেগুলেট করতে সাহায্য করে।গোটা দানাশস্য যেমন বাদামী ভাত ,ঢেঁকিছাটা চাল ,কুইনোয়া ,ওটস ও বিভিন্ন ডাল মুগ,মুসুর ,সবুজ মুগ ইত্যাদি জিঙ্কের খুব ভালো উৎস।দিনে ৩ বেলার খাবার ব্রেকফাস্ট ,লাঞ্চ ও ডিনারে দানাশস্য যেন অবশ্যই থাকে। ভিটামিন C শরীরকে জিঙ্ক শোষণে সাহায্য করে তাই রোজকার ডায়েটে লেবু,ক্যাপসিকাম ,টক জাতীয় ফল ইত্যাদি অবশ্যই রাখবেন।
সেলেনিয়াম(Selenium is good for Thyroid)
সেলেনিয়াম থাইরয়েড হরমোন গুলোকে সক্রিয় করে তোলে যাতে শরীর সেগুলোকে ব্যাবহার করতে পারে। এই প্রয়োজনীয় মিনারেলটির এন্টি অক্সিডেন্ট প্রোপার্টি রয়েছে যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে বিভিন্ন ফ্রি রেডিক্যাল ও টক্সিন থেকে রক্ষা করে।
মানুষের শরীরে প্রতিদিন 55 mcg সেলেনিয়ামের প্রয়োজন হয়। সেলেনিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস হলো ব্রাজিল নাট। আমাদের দেশে এটি খুব একটা সহজ লভ্য নয় কারণ এটা আমাদের দেশে হয়না। যদি আপনার কাছে সহজ লভ্য হয় তাহলে অবশ্যই খান। প্রতিদিন ১ টি ব্রাজিল নাট আপনার সারাদিনের প্রয়োজনীয় সেলেনিয়ামের যোগান দেবে। কিন্তু এটি যদি সহজ লভ্য না হয় তাহলে সেলেনিয়ামের অন্যান্য উৎস গুলি ডায়েটে যোগ করুন যেমন বাদামি ভাত ,কাজুবাদাম ,পালং শাক,চিয়া সিড ,ফ্ল্যাক্স সিড,মাসরুম ইত্যাদি। ১ কাপ রান্না করা বাদামী ভাত 19mcg সেলেনিয়াম দিতে পারে।
প্রোটিন(Protein is needed for healthy Thyroid Function and overall health )
প্রোটিন আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তাছাড়া প্রোটিন শরীর থেকে টক্সিন বর্জন করতেও সাহায্য করে। হাইপোথাইরোয়েড রোগে মোটা হওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। তাই ওজন কন্ট্রোলে রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন। প্রোটিনের ভালো উৎস হলো চিকেন,মাছ ,ডিম,ডাল ,মটর,সোয়াবিন,বাদামী ভাত(Brown Rice)।
তবে এই সব প্রোটিন তখনই গ্রহণ করুন যদি এগুলো এন্টিবায়োটিক্স , গ্রোথ হরমোন মুক্ত হয়। বাজারে যে চিকেন বা ডিম পাওয়া যায় তা সবই প্রায় বদ্ধ ফার্মে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হয়। এগুলো শরীরে ভালোর চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি করে। তাই যদি বাড়িতে পোষা মুরগি ,মুরগির ডিম, বা পুকুরের মাছ হয় তবেই খান।ডিম খেলে কুসুম বাদে খাবেন। তবে আমি বলবো এগুলো বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ প্লান্ট বেসড প্রোটিন খান অথবা এগুলো খেলেও কম খান ও তার সাথে প্লান্ট বেসড প্রোটিন অনেক বেশি খান(At least যত দিন না সুস্থ হচ্ছেন)। ডাল ,সবুজ মটর, বাদামী ভাত(Brown Rice) উদ্ভিজ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্লান্ট বেসড ডায়েট বা ভিগান ডায়েট করেন তাদের থাইরয়েড রোগের সম্ভাবনা একদম কম।
এন্টি ইনফ্লামেটোরি ফুড(Eat good amount of Anti-Inflammatory food for good Thyroid function )
ডায়েটে অনেক বেশি পরিমানে এন্টি ইনফ্লামেটোরি ফুড যোগ করুন অর্থাৎ যে সব খাওয়ার শরীরে প্রদাহ কম করতে সাহায্য করে। হলুদ ,দারচিনি,কমলা লেবু , সবুজ শাক সবজি, বেরি ,জাম ,আমলকি ইত্যাদি ডায়েটে যোগ করুন। হলুদের আন্টি ইনফ্লামেটোরি পদার্থ কারকিউমিন(Curcumin) শরীরে ভালোভাবে 100 %শোষণ করতে গোলমরিচ সাহায্য করে। তাই যেসব খাবারে হলুদ দিচ্ছেন সেই সব খাবারে গোলমরিচও যোগ করুন।
কিছু টিপস (Tips for Thyroid management and Thyroid related gained weight management )
- প্রতিদিনের ডায়েটে ১ টেবিলচামচ কালোজিরে যোগ করুন। রান্নাতে দিয়ে খান বা সিম্পলি গুঁড়ো করে জলে মিশিয়ে খান। গবেষণায় দেখা গেছে কালোজিরে হাইপোথাইরোয়েডিজম রোগীদের TSH লেবেল উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
- সকালে খালিপেটে গরম জলে লেবু মিশিয়ে খান।গরম লেবু জল শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার বা পানীয় থাইরয়েড রুগীদের জন্য খারাপ। ফ্রিজের জল ,কোল্ড ড্রিঙ্কস একদম খাবেন না। আমাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ঠান্ডা জিনিস একদম পছন্দ করে না। ফ্রিজের খাবার খেলে সবসময় ভালো করে গরম করে খাবেন।
- প্রতিদিনের খাবারে ফল ও শাকসবজি বেশি বেশি খান।
- ভিটামিন-Dযুক্ত খাবার যেমন পালং শাক,মাশরুম ইত্যাদি রাখুন। ভিটামিন-D এর বেস্ট সোর্স হলো সূর্যের আলো। প্রতিদিন গায়ে ৫ মিনিট সূর্যের আলো লাগান অথবা সপ্তাহে ৩ দিন ১৫ মিনিট করে রোদ্দুর লাগালেই হবে।
- ফুড ডাইরি বা ফুড জার্নাল মেনটেইন করুন। প্রতিদিন কি খাচ্ছেন তা প্রতিদিন ডাইরি তে লিখে রাখুন।আর নাহলে আজ কাল অনেক ফুড ও ক্যালোরি কাউন্টের অ্যাপ আছে সেগুলো ব্যাবহার করুন। এতে আপনার বুঝতে সুবিধে হবে কি ধরনের খাবার প্রতি আপনার চাহিদা কেমন,কত পরিমানে খাচ্ছেন ,কতটা ক্যালোরি খাচ্ছেন। এই সব কিছু আপনার হেলদি ডায়েট মেনটেন করতে সাহায্য করবে।
- প্রতিদিন ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট কোনো না কোনো ব্যায়াম, যোগাসন ইত্যাদি করুন।মৎসাসন,উষ্ট্রাআসন ইত্যাদি স্পেশালি থাইরয়েড রুগীদের জন্য উপকারী যোগাযোন।থাইরয়েড রুগীদের ক্লান্তি অনেক বেড়ে যায়। তাই কোনো পরিশ্রম করতে ভালো লাগেনা। কিছু যদি ভালো না লাগে দিনে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন। তাহলেও আপনার হেলথ ভালো ও ওজন কন্ট্রোলে থাকবে।
- স্ট্রেস কমান। স্ট্রেস আমাদের শরীরে অনেক অনেক লাইফ স্টাইল ডিজিজ এর জন্য দায়ী। সারাদিনে যদি সময় পান মেডিটেশন করুন। সারাদিনে কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমোন।
কখনোই ক্র্যাশ ডায়েট বা অতিরিক্ত কম ক্যালোরির ডায়েট করবেন না। যাদের মেটাবলিক রেট কম তাদের জন্য কম ক্যালোরির ডায়েট একদম ঠিক নয়। দিনে ১৫০০ ক্যালোরির কম খাবার খাবেন না। ক্যালোরি কাউন্টের দিকে মন না দিয়ে বরং পুষ্টিগুণের দিকে লক্ষ্য রাখুন। শরীর কে সঠিক নিউট্রিশন দিলে শরীরের মেটাবলিক রেট ও ঠিক থাকবে ওজন কন্ট্রোলে থাকবে। কম ক্যালোরির ডায়েট হয়তো কিছুদিনের জন্য ওজন কমাবে কিন্তু ফল সরূপ মেটাবলিক রেট কমিয়ে দেবে। তারপর যে পরিমানে ওজন কমেছে তার দ্বিগুন পরিমানে বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ডায়েট কন্ট্রোল করলে অনেকেই তেল বা ফ্যাট একদম ব্যাড দিয়ে দেন। সেটাও কিন্তু ঠিক নয়। হেলদি অয়েল আমাদের ক্ষুধা কে নিয়ন্ত্রণ করে ও পেট ভর্তির অনুভূতি দেয়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। তাছাড়া খাওয়ারকে সুস্বাদু বানায়।স্বাদহীন খাওয়ার খেয়ে বেশিদিন ডায়েট করতেও পারবেন না। দিনে ৬ টেবিল চামচ মত ফ্যাট শরীরে প্রয়োজন হয়।
- হেলদি অয়েল অলিভ অয়েল, ফ্লাক্সসিড অয়েল ইত্যাদি ব্যাবহার করুন। অলিভ অয়েলকে কখনোই উচ্চ তাপমাত্রার রান্নায় ব্যবহার করবেন না।উচ্চ তাপমাত্রায় এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পদার্থই তৈরী করে। সূপ ও স্যালাডে কাঁচা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন বা হালকা সাঁতলে নেওয়া রান্নায় ব্যাবহার করুন।
- থাইরয়েডের ওষুধ যেমন খাচ্ছেন তেমনই চালিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কখনো হটাৎ করে ওষুধ বন্ধ করে দেবেন না।
হাইপোথাইরয়েড রোগীর সম্ভাব্য খাবার তালিকা (Hypo-Thyroid Food Chart in Bengali)
নিচে থাইরোয়েডের ডায়েট চার্টের সম্ভাব্য নমুনা দেওয়া হলো
Thyroid Diet Chart in Bengali
- কোন রান্নায় চিনি দেবেন না ।যদি রান্নায় মিষ্টি দিতেই হয় তো সামান্য গুড় ব্যবহার করুন।
- রান্নায় আয়োডিন যুক্ত সি সল্ট/ হিমালআন পিঙ্ক সল্ট ব্যবহার করুন
- স্যালাডে কাঁচা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন
এন্টি ইনফ্লামেটোরি ড্রিঙ্কস(Anti-Inflamatory Drinks for Thyroid Patient in Bengali)
Type 1– ১ মুঠো পুদিনা পাতা +১ মুঠো ধনেপাতা +১/২ চামচ অলিভ অয়েল+১ টেবিল চামচ চিয়া সীড ১/২ টি লেবু +স্বাদমত হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট (Himalayan pink salt)+ ভাজা জিরে গুঁড়ো +৫ টি রাতভর ভেজানো কাজু +১/২শসা +১ গ্লাস জল – এই সবকিছুকে মিক্সারে দিয়ে ব্লেন্ড করে খেয়ে নিন।
Type 2- ৪ চামচ এলোভেরার জুস অথবা ১/২ টি ফ্রেশ এলোভেরা পাতার ভেতরের জেলি+ বাতাবি লেবু ৩ কোয়া +১ গ্লাস জল +১/২ টি লেবু +স্বাদমত হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট (Himalayan pink salt) – এই সব কিছুকে মিক্সারে দিয়ে ব্লেন্ড করে খেয়ে নিন।
Type 3- ১/২ টি গাজরের জুস+১/২ টি আপেল + ১/২ টি লেবু + স্বাদমত হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট (Himalayan pink salt)+১ টেবিল চামচ চিয়া সীড+ভাজা জিরে+ভাজা কুমড়োর বীজ – এই সব কিছুকে মিক্সারে দিয়ে ব্লেন্ড করে খেয়ে নিন।
শেষকথা-(Conclusion)
ওষুধের সাথে সাথে ওপরে বলা টিপস ও ডায়েট গুলি মেনে চলুন। আশাকরি নিশ্চই ফল পাবেন। মনে রাখবেন প্রাকৃতিক উপায়ে সারাতে কিন্তু সময় লাগবে। সঠিক নিউট্রিশন পেলে আমাদের শরীরের সে ক্ষমতা রয়েছে যে অনেক রোগ কেই নিজে সরিয়ে তুলতে পারে। তাই ধৈর্য ধরুন ও শরীরকে সুস্থ রাখুন।
এই প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে ও কাজে লেগে থাকে তাহলে এখনই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন, লাইক করুন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল সবার আগে পেতে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন। আপনার একটা শেয়ার ,একটা লাইক নতুন কিছু লিখতে উৎসাহ যোগাবে। আমাদের এই ব্লগটিকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য যদি আপনার কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই সাজেস্ট করুন । এই বিষয়ে আপনার মতামত, সাজেশান বা কিছু প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান।
image credit nikapeshkov/freepik ,