১০ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা ||10 month old baby food chart in Bengali

১০ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা || 10 month old baby food chart in Bengali 

10 maser bacchar khabar

বড়দের মত ছোটদেরও সব ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন হয়।শিশুর ১০ মাস বয়স অনেক মায়েদের চিন্তার কারণ হয় শিশুদের না খেতে চাওয়া। অনেকেই মনে করেন যে শিশুর বুঝি ক্ষিদে কমে গেছে। ফলে আমার শিশু প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে  মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো শিশুর ক্ষিদে মোটেই কমে যায়নি। এখন সে আর আগের মতো ছোট নেই,চারিদিকে ছুটে বেড়াতে ,খেলা করতে আর নতুন খেলনা বা মুভমেন্ট আবিষ্কার করতে ব্যস্ত। সুতরাং খাবারেও তার নতুনত্ব চাই(10 month old baby food menu )। 

শিশুদের এই সময় দিনে ৫ বার খাওয়াতে হবে। যার মধ্যে ফল ও সবজি যেন অবশ্যই থাকে। শিশুকে সব ধরনের পুষ্টির জন্য সব রঙের সবজি খাওয়ান।সবুজ সবজি (যেমন মটর, বিন্স, শিম ,ক্যাপসিকাম,ব্রকোলি  ইত্যাদি )সাদা সবজি (আলু,ফুলকপি ,রাঙা আলু,ওলকপি ইত্যাদি )লাল রঙের সবজি (টমেটো ,রেড বেল পেপার ইত্যাদি ) হলুদ সবজি (কুমড়ো ,গাজর, হলুদ বেল পেপার ইত্যাদি) এগুলো  খাওয়াতে হবে। যদিও বাজারে কিনতে পাওয়া ফলের জুস চটজলদি ও পুষ্টিকর বিকল্প মনে হতে পারে কিন্তু তা মোটেই ভালো নয়। এসব প্যাকটের জুসে থাকে প্রচুর পরিমানে চিনি, প্রিজারভেটিভ,তাছাড়া এগুলো হয় ফাইবার বিহীন। তাই  এসব ভুলেও খাওয়াবেন না।এখন দেখে আপনি তাকে সব ধরনের দানাশস্য খাওয়াতে পারবেন। যদিও এখন থেকে তাকে কেনা ইনস্ট্যান্ট  সিরিয়াল বা বিস্কিট খাওয়াতে পারেন।কিন্তু তা খাওয়ানোর আগে অবশ্যি ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে নেবেন। তবে চেষ্টা করবেন এসব না খাওয়াতে বা অল্প খাওয়াতে কারণ এসবে থাকা প্রিজারভেটিভ শিশুর জন্য মোটেই ভালো না। 

কিভাবে শিশুকে বাড়ির স্বাভাবিক খাওয়ার খাওয়াবেন (How to introduce food to your baby from family pot.)

প্রায় ৯ মাস বয়স থেকেই শিশুরা বাড়ির স্বাভাবিক রান্না খেতে পারে। তাই এখন আপনি যা খাচ্ছেন তা তাকেও খাওয়াতে পারেন। ফলে আপনার পরিশ্রমও করবে। আলাদা করে বাচ্চার খাবার করতে হবে না। ধরুন আপনি রাতের ডিনারে সবজি ডাল রুটি বানাচ্ছেন, ডাল সবজি সেদ্ধ করে বাচ্চার জন্য কিছুটা তুলে রেখে শুধু অল্প তেলে সাঁতলে নিন। ডালের মধ্যে রুটি ভিজিয়ে স্ম্যশ করে নিন.ব্যাস হয়ে গেলো। দিনে হয়তো কোনো সবজি যেমন কুড়োর তরকারি বা পেঁপের তরকারি বানাচ্ছেন। রান্নায় অল্প তেল দিন আর লঙ্কা দেয়ার আগে বাচ্চার জন্য তুলে রাখুন।তাহলে আর আলাদা করে রান্না করতে হবে না।    তাবলে সব কিছু তাকে খাওয়াতে পারবেন না। মনে রাখবেন তার পরিপাক তন্ত্র এখনো পরিপক্ক হয়নি। অতিরিক্ত তেল মসলা তেলেভাজা এসব কিন্তু বাচ্চাকে দেবেন না। 

এর সাথে মনে রাখবেন যতই কঠিন খাবার দিন না কেন বাচ্চাকে ফর্মুলা বা ব্রেস্ট মিল্ক খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। এখন শিশুরা সাধারণত  প্রায় ৪০০ মিলি থেকে ৬০০ মিলি মিল্ক খেতে পারে। প্রত্যেক শিশু অনুযায়ী এর পরিমান বিভিন্ন। দিনে শিশুকে  তিন থেকে পাঁচ বার মিল্ক দিতে পারেন। এছাড়া সে খেতে চাইলে তো অবশ্যই খাওয়াবেন। শিশুকে এখন প্রয়োজন অনুযায়ী জল খাওয়াবেন।শিশুকে এই সময় ১৫০ মিলি থেকে ১৮০ মিলি জল খাওয়াতে পারেন।

শিশুকে নতুন ধরনের খাবার দেয়ার সাথে সাথে তার এলাৰ্জি হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।একবারে যে কোনো একধরনের নতুন খাবার যোগ করুন। দুই বা তার বেশি ধরনের নতুন খাবার একসাথে দেবেন না। যে কোনো নতুন খাবার দেওয়ার পর তিন দিন অপেক্ষা করুন। 

শিশুর পাকস্থলী তার হাতের মুঠোর সমান।অল্প তেই ওদের পেট ভোরে যায়। এই বয়সের বাচ্চারা যতটা খিদে ততটাই খায়, তাই বেশি খেতে না চাইলে  জোর করে খাওয়াবেন না। ১০ মাস বয়সের  শিশু প্রতিবারে ২০০ মিলি মতো খাবার খেতে পারে। শিশুর খিদে অনুযায়ী এর পরিমান বাড়তে বা কমতে পারে।  

আরো পড়ুন গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

খাওয়ানোর আগে সব পাত্রগুলি কে জীবাণু মুক্ত করার জন্য গরম জলে পাঁচ মিনিট ধরে ফোটান এবং ব্যাবহারের আগে অবধি ওই গরম জলেই রাখুন। 

স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার  সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তি তৈরী করে। মা বাবা হিসেবে আপনি এখন থেকেই তার যে ধরনের খাদ্যাভ্যাস তৈরী করবেন তা আজীবন থাকবে। 

১০ মাসের শিশুর বেবি ফুড রেসিপিতে কোন কোন খাবার আপনি যোগ করতে পারবেন(What is in The food menu of a 10 month old baby )

 ৯মাস বয়সে যে খাবার গুলি যোগ করেছেন তার সাথে এই মাসে আরো কিছু খাবার যোগ করতে হবে।  এখন থেকে শিশু প্রায় সব ধরনের খাবার খেতে পারবে। কোন কোন  খাবার গুলি ১০ মাস বয়সের উপযুক্ত তা দেওয়া হলো।   
ফল 
আপেল, কলা, নাশপাতি,অ্যাভকাডো,খেজুর, আম, স্ত্রবেরি, সবেদা পেঁপে,তরমুজ, কমলালেবু ,ডাবের জল ,কিউই ,বেদানা, মোসাম্বি লেবু ,আনারস, আঙুর।সব ধরনের ফল খাওয়াতে পারেন যে সময় যা পাওয়া যায় । তবে যে কোনো লেবু বা টক জাতীয় ফল অল্প পরিমানে খাওয়াবেন।  

শাকসবজি 
গাজর, কুমড়ো ,মটর, বিন্স ,আলু ,মিষ্টি আলু, ব্রকলি, ফুলকপি, টমেটো, বীট,পালং শাক ,ব্রকলি ,বাঁধাকপি ,লাউ ,ক্যাপসিকাম ,চিচিঙ্গা ,বেগুন, ওলকপি, মাশরুম ,ভুট্টা ,শসা,পটল , ঢ্যাঁড়স। সিজিনে পাওয়া সব ধরনের সবজি খাওয়াতে পারেন। 

ডাল ও দানা শস্য 
চাল,সুজি, রাগি ,বার্লি, ওটস, সাবুদানা ,মুড়ি,কুইনোয়া ,মুসুর ডাল, মুগ ডাল ,দালিয়া, ছোলা, চিড়ে, আটা, ময়দা ,বেসন ,সয়াবিন। সব ধরনের সিরিয়াল খাওয়াতে পারেন। 

দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য 
ঘি ,পনীর ,দই ,চীজ , বাটার। 
আমিষ 
মাছ ,ডিম, মুরগির মাংস। 
মসলা 
হলুদ, জিরে, ধনে, মৌরি ,জোয়ান ,হিং(খুবই সামান্য পরিমানে) ,দারুচিনি ,এলাচ, ধনেপাতা ,কারিপাতা ,পুদিনা পাতা, সর্ষে ,মেথি, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ,লবঙ্গ, কেশর (সব মশলাই খুব সামান্য পরিমানে ব্যাবহার করবেন)। 
10 maser bacchar khabar talika

প্রতিদিন কতটা পরিমান খাবার খাওয়াবেন (Every day how much food you can give to your 9 months old baby)

বাচ্চার খিদের চাহিদা  অনুযায়ী বাচ্চাকে খাওয়াবেন।খাবারের পরিমান ৯ মাসের মতোই।শিশুকে  পাঁচ বার প্রতি বারে কতটা খাওয়াতে পারবেন তার একটা মোটামুটি আইডিয়া দেওয়া হলো। বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে ও শিশুর খিদে অনুযায়ী এর পরিমান ভিন্ন হতে পারে।  

সকাল ৯ টা(Breakfast) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ। 

দুপুর ১২ টা – ১/৪ কাপ। 

দুপুর ১.৩০ টা(Lunch) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ। 

বিকেল ৫ টা -১/৪ কাপ। 

রাত্রি ৮ টা(Dinner) – ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ।

আরো পড়ুন শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা  বৃদ্ধির প্রাকৃতিক  উপায়

প্রতিদিন কোন ধরনের খাদ্য কতটা খাওয়াবেন (How much quantity of each food category you can give to your 9 months baby per day)

ফল -৩/৪ থেকে ১ কাপ। 

দানা শস্য -১/২ কাপ থেকে ৩/৪ কাপ। 

শাকসবজি -৩/৪ থেকে ১ কাপ।

দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য – ১/৪ কাপ থেকে ১/৩ কাপ। 

আমিষ – ১/৪ কাপ থেকে ১/৩ কাপ 

মশলা – খুবই সামান্য পরিমানে। 

১০ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকার সময় নির্ঘণ্ট (১০ month old baby food chart menu in Bengali )

১০ মাসের শিশুর খাবার অনেকটা ৯ মাস বয়সী শিশুর মতোই। নিচে ১০ মাস বয়সী শিশুর প্রত্যেক সপ্তাহের খাদ্য তালিকার একটি নমুনা দেওয়া হলো(10 maser baccar khabar talika)। 
Week 1

 

Week 2

বেবি ফুড রেসিপি


   

Week 3

১০ মাসের বাচ্ছাদের খাদ্য তালিকা

Week 4

শেষ কথা (Conclusion)

১০ মাস বয়সে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত হতে থাকে।হাত ও চোখের সমন্বয় আরো মজবুত হয়। ছোট খাটো জিনিস সহজে আঙুলের সাহায্যে ধরতে পারে। এই বয়সে সব মাইলস্টোন গুলি যেমন হামাগুড়ি দেওয়া , নিজের পায়ে নিজের ভর নিতে পারা, বেশ কিছু শব্দ যেমন মা বাবা , দিদি , দাদা  উচ্চারণ করে কথা বলার চেষ্টা করা, ইত্যাদি অর্জন করেছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। শিশুর খাওয়া নিয়ে অযথা চিন্তা করবেন না। মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুর বড়ো হওয়ার গতি আলাদা তাই নিজের শিশুকে অন্য শিশুর সাথে তুলনা করবেন না। 
এই প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে ও কাজে লেগে থাকে তাহলে এখনই অন্য বাবা মায়েদের সাথে শেয়ার করুন, লাইক করুন । আর আপনার মতামত, সাজেশান বা কিছু প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে আমাদের জানান। 
সমস্ত প্রতিবেদন ফেসবুকে পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ  Momsbangla ফলো করুন।

আরো পড়ুন ৬ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা 

                    ৭ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা

                     ৮ মাস বয়সী শিশুর বাঙালি খাবারের তালিকা

                      ৯ মাস বয়সী শিশুর খাবার মেনু

                      ১২ টি খাদ্য যেগুলি সন্তান ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও গর্ভবতী হতে সাহায্য করে

Recommended Articles

6 Comments

  1. বাচ্চার পায়খানা খুব শক্ত হচ্ছে, ওকে কি খাওয়াবো, সকালের খাবারে কি দিলে ভালো হবে?

  2. যদি এখনো আপনার বেবির কনস্টিপেশন এর সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের 'শিশুদের কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়' এই আর্টিকেল টি পড়ে দেখতে পারেন।
    যদি বেবির কনস্টিপেশন এখনো থাকে তাহলে ওকে সকালে ওটস বা অন্যান্য ফাইবার যুক্ত খাবার দিন।

  3. আমার বাবুর ওজন তুলনা মূলক কমে যাচ্ছে। অবশ্য বাবুর উপরের ও নিচের পাটিতে দাত উঠার সময় পেটের সমস্যা কারণে বেশ কিছু দিন খাবার খেতে পারেনি। এখন একটু দাড়াতে চেষ্টা করছে। এখন বাবুর ওজন না বাড়ার কারণ বুঝতে পারছি না। প্লিজ হ্যাল্প করবেন পরামর্শ দিয়ে।

    1. দাঁত ওঠার সময় বাচ্চাদের এরকম হয়।ধৈর্য্য ধরুন,একটু সময় দিন আস্তে আস্তে আবার সব খেতে শুরু করবে। পারলে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত সহজপাচ্য খাবার যেমন ডালভাত ,চিড়ে ,সুজি,আপেল সেদ্ধ ভালো করে নরম করে সেদ্ধ করে দিন। যদি কিছুদিন অপেক্ষা করার পর বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন না বাড়ে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.