হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা ও আমার লাইফ ।। Hydradenitis suppurativa and my life

হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা ও আমার লাইফ ।।Hydradenitis suppurativa and my Life

Hidradenitis suppurativa

হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা কি ||  What is hidradenitis suppurativa ?

হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা হলো এক ধরনের ত্বকের প্রদাহ জনিত, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা ত্বকের গভীরে যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়ার সৃষ্টি করে। এই ফোঁড়া গুলো জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় তাহলে পুঁজের সৃষ্টি হয় এবং ফোঁড়া ফেটে গেলে খারাপ গন্ধের সৃষ্টি করে।সাধারণত এই ধরনের ফোঁড়া যেসব জায়গায় ঘর্ম গ্রন্থি রয়েছে এবং ত্বক একে অপরের সাথে ঘষা খায় যেমন বগল, নিতম্ব(buttocks) ,কুঁচকি(groin) সেই সব জায়গায় হয়। এছাড়া এই সব সাধারণ জায়গা ছাড়াও পিঠে,গলায়,তলপেট.এমনকি পুরো শরীরেও হতে পারে। ফোঁড়া গুলো বার বার একই জায়গায় হতে থাকে , বহূদিন বা মাস লেগে যায় সারতে এবং ত্বকে কালো দাগের সৃষ্টি করে। এই রোগ রোগীকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে।   
সাধারণত বয়ঃসন্ধি কালে এই রোগের সূচনা হয়। একটা বা দুটো ছোট সাইজের ফোড়া দিয়ে শুরু হয়। এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। প্রায় প্রত্যেক ৪ জন রুগীর মধ্যে  ৩ জন মহিলা হয়ে থাকেন। 
 

হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা কেন হয় (Causes of hidradenitis suppurativa)

কোনো ডাক্তারই  সিওর নন  এই রোগ কেন হয়। কেননাএর কোনো স্পষ্ট কারণ মেডিক্যাল সায়েন্সএর কাছে নেই।বিভিন্ন জন এর কারণ বিভিন্ন মনে করেন।এই রোগ জিন ঘটিত কারণে,ইমিউনিটি রেসপন্সএর গন্ডগোল বা অটো ইমিউন রোগ,অতিরিক্ত মোটা হওয়া ,হরমোন , ধূমপান , মাদক সেবন, স্ট্রেস , ঘুম কম, ছিদ্রময় অন্ত্র (Leaky gut), পরিবেশের প্রভাব এই সব কারণে হয় বলে অনেকে মনে করেন। সোজা কথায় এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। 
এই রোগের  কারণ অনেক কিন্তু সম্পূর্ণ সারানোর ওষুধ বা পদ্ধতি একটিও নেই। রোগের বেথা উপশম ও কন্ট্রোলে রাখার বিভিন্ন পদ্ধতি ও ওষুধ  যদিও রয়েছে তবে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হওয়ার কোনো গ্যারেন্টি নেই। এর বিভিন্ন ট্রিটমেন্টের মধ্যে রয়েছে লেজার হেয়ার রিমুভাল , এন্টিবায়োটিক্স এর ব্যবহার , সার্জারি , স্টেরোয়েড ইত্যাদি। 

 

হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভা ও আমার স্টোরি ( Hydradenitis Suppurativa and my Life )

আমার বয়স যখন ১২ তখন আমার শরীরে এই রোগ প্রথম দেখা দেয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই রোগে ভুগছি এবং আমার এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে ২০২০ তে । দীর্ঘ সতেরো বছরে আমি যেসব ডাক্তার দেখিয়েছি তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন স্কিন র‍্যাশ,কেউ বলেছেন এক ধরনের ব্রণ, কেউবা জানেনই না এটা কি। সুতরাং এতো বছর ধরে শুধু যন্ত্রনা সহ্য করেছি, উপশম কিছুই হয়নি। 
আমি ২০১৯ এ মা হই। মা হওয়ার পর এই রোগের মাত্রা খুব বেড়ে যায়। এক এক সময় শরীরে ৭ টি ৮ টি ফোঁড়া হতে শুরু করে এবং শরীরের নতুন নতুন স্থানে যেখানে আগে কখনো ফোঁড়া হয়নি সেখানেও হতে শুরু করে। এমনকি আমার সিজার এর কাটা স্থানেও হতে শুরু করে, যেটা আমাকে ভীষণ ভয় পাইয়ে দেয়। আমি নতুন এক জন ডার্মাটোলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করি এবং উনি আমায় প্রথম এই রোগ সম্পর্কে জানান। এর আগে পর্যন্ত আমি অনেক ডাক্তার এর সাথে কনসাল্ট করেছি কিন্তু কেউই আমায় বলতে পারেননি যে আমার এই রোগটা আসলে কি। রোগ ধরা পড়ার  পর আমার ভালো ও খারাপ দুটোই লেগেছিলো। ভালো এই কারণে লেগেছিলো যে অন্তত আমি জানতে তো পারলাম এতো বছর ধরে আমার সাথে কি হচ্ছিলো। আর খারাপ লাগছিলো এই জন্য যে এই রোগের কোনো ওষুধ নেই।
আমার নতুন ডার্মাটোলজিস্টই আমায় সাজেষ্ট করেন ইন্টারনেট থেকে এই রোগ সম্পর্কে ভালো করে পড়তে ও জানতে, এবং এই ইন্টারনেট থেকেই আমি এই রোগ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাই। 
অনেকে মনে করেন যাদের এই রোগ হয় তারা পরিষ্কার থাকেনা বা হাইজিন মেনটেন করেন না।  কিন্তু বিশ্বাস করুন এই রোগের সাথে পরিষ্কার পরিছন্নতার কোনো সম্পর্ক নেই।আপনি কতবার স্নান করেন বা কতবার সাবান মাখেন এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।  কারণ এটা সম্পূর্ণ ভেতর থেকে হয়। 
তো যাই হোক , বিভিন্ন সোর্স থেকে জানতে পারি যে আমরা যা খাই তার অনেক কিছুই আমাদের শরীর গ্রহণ করতে পারেনা ও আমাদের শরীরে প্রদাহের(Create inflammation) সৃষ্টি করে। সুতরাং আমি AIP Diet সম্পর্কে পড়তে শুরু করি ও জানতে পারি যে এই ডায়েট অনেক কে সুস্থ করেছে  এবং  অনেকের রোগের মাত্রা ও যন্ত্রনা কমিয়েছে। সুতরাং আমিও AIP Diet  শুরু করি এবং বিগত ৮ মাস ধরে এই ডায়েট ফলো করছি। আমি আমার স্কিন কেয়ার রুটিন ও চেঞ্জ করেছি। যতটা সম্ভব কম কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করছি। স্ট্রেস ম্যানেজ করতে শিখেছি।এবং চেষ্টা করি প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ঘন্টা ঘুমোতে ,কারণ ঘুম কম হওয়া ও স্ট্রেস হাইড্রডেনাইটিস সুপরাটাইভার অন্যতম কারণ। 
বিশ্বাস করুন লাইফস্টাইল এর এই সব কিছু পরিবর্তন আমার ভীষণ কাজে দিয়েছে। যদিও প্রথম দিকে এই ডায়েট আমার কাছে ভীষণ ফ্রাস্ট্রেশনের ছিল। এই ডায়েট মেনটেন করা খুবই কষ্টের এবং শুরুতেই আপনি রেজাল্ট দেখতে পাবেন না।কিন্তু আপনি যদি অপেক্ষা করেন ও হুবহু মেনে চলেন তাহলে হয়তো রেজাল্ট দেখতে পাবেন। আমি বলছিনা সবাই এই ডায়েট করে সাকসেস হয়েছেন বা হবেন।  কারণ সবার ট্রিগার আলাদা। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই ডায়েট শুরু করার প্রায় ২ মাস পর থেকে আমার সব ফোঁড়া শুকোতে থাকে। ৪ মাসের মধ্যে প্রায় সব ফোঁড়া ভালো হয়ে যায়। বিগত প্রায় ৩ মাস ধরে দুই একটা ছোট ফোঁড়া (বড়ো মাপের ব্রণর মত যেগুলোর জন্য কোনো যন্ত্রনা বা ব্যাথা অনুভব হয়নি) ছাড়া শরীরে কোনো বড়ো ফোঁড়া আর সৃষ্টি হয়নি। এবং এমনকি পুরোনো দাগ গুলো হালকা হতে শুরু করেছে।
এখন আমি আমার জীবন আবার উপভোগ করতে শুরু করেছি। এতো বছরের মানসিক স্ট্রেসও কমে গেছে।আমি জানি এখনো অনেকে আছেন যারা এই রোগ নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ভারতের মতো দেশে আমরা বিশেষ করে মেয়েরা এখনো রোগ(hidradenitis suppurativa in India) নিয়ে কথা বলতে কুন্ঠা বোধ করি। এমনকি আমিও নিজে একথা কাউকে কখনো বলতে পারিনি ,এমনকি নিজের মা বাবার থেকেও ৫ থেকে ৬ বছর লুকিয়ে রেখে ছিলাম। তবে আমি এখন  সবার সাথে এই রোগ নিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারি , আমার কলিগ, পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধবদের দেরও এই  রোগ সম্পর্কে জানিয়েছি।তবে এই রোগ নিয়ে মন খুলে কথা বলা আমাকে  মানসিক ভাবে ফ্রি হতে অনেক সাহায্য করেছে।
আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি এই ধরনের উপসর্গ যুক্ত রোগে ভুগছেন, বা এমন কাউকে জানেন যিনি এই রোগে ভুগছেন,কিন্তু এখনো ডাক্তার দেখান নি তাহলে অবশ্যই কোনো ভালো ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। কারণ এই রোগের তাড়াতাড়ি ও সঠিক ডায়াগনোসিস হওয়া  খুবই জরুরি। এবং এই রোগ সম্পর্কে আরো জানতে চান তাহলে ইন্টারনেটে প্রচুর সোর্স রয়েছে খুঁজে দেখতে পারেন। মনে রাখবেন আপনি এক নন। পৃথিবীর ১ শতাংশ লোক এই রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ ভারতের জনসংখ্যা অনুযায়ী এখন প্রায় ১৩ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত। ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ লোকের শরীরে  এই রোগ ধরা পড়ে।    

যদি এই প্রতিবেদন টি আপনার ভালো লাগে, এই রোগ ও আমি কিভাবেকন্ট্রোলে রেখেছি যদি জানতে চান বা আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান।আপনি যদি আপনার নাম গোপন রাখতে চান তাহলে কমেন্ট সেক্শনে নামহীন ভাবেও কমেন্ট করতে পারেন , বা আমাদের কণ্টাক্ট করতে পারেন।     

 

 



 



 
   

Recommended Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.