Home Remedies for Child’s Cough and Cold in Bengali || বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের সর্দি কাশির কারণ(Cause of cough and cold in babies and child in Bengali)
শিশুদের ইমিউন সিস্টেম খুবই দুর্বল হয়। জন্মের এক বছরের মধ্যে বাচ্চারা প্রায়শই সর্দি কাশি তে ভোগে।১ বছরের বেশি বয়স হলে ঠান্ডা লাগা একটু কমে কিন্তু সিজন চেঞ্জ হলে বা জীবাণুর সংস্পর্শে এলে বাচ্চাদের সর্দি কাশি হয়। যখন কেউ হাঁচে বা কাশে তখন বাতাসে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। বাচ্চা সেই জীবাণু যুক্ত বাতাসের সংস্পর্শে এলে সহজেই ইনফেক্টেড হয়ে যায়।
বাচ্চার ২ ধরনের সর্দি কাশি হতে পারে
১. ঠান্ডা লেগে সর্দি কাশি
২. শুকনো সর্দি কাশি
আপনার বাচ্চার কোন ধরনের সর্দি কাশি হয়েছে সেটা বুঝে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
বাচ্চার বয়স ২ বছরের নিচে হলে কোনো এন্টিবায়োটিক্স বা ঠান্ডা সাপ্রেস করার ওষুধ দেবেন না ।এন্টিবায়োটিক্স ছোট বাচ্চাদের জন্য একদম খারাপ।আর ঠান্ডা সাপ্রেস করার ওষুধ সর্দি কাশি কে জাস্ট টেম্পোরারি সারায়,কিন্তু ভেতর থেকে ভালো করে না। সর্দি কাশি হলে নিজে থেকেই ভালো হতে সময় দিন। নিজে থেকে সুস্থ হতে দিলে বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম জীবাণুগুলি কে শনাক্ত করতে শেখে যা বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া সর্দি কাশি নিজে থেকেই ৪ থেকে ৮ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে বাচ্চার কষ্ট কম করার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায় ট্রাই করতে থাকুন।
বাচ্চার সর্দি কাশি যাতে সহজে না হয় তার জন্য কি করবেন(How to prevent cough and cold in babies in Bengali)
- বাচ্চাকে ধোঁয়া ,সিগারেটের ধোঁয়া ,পলিউশান থেকে দূরে রাখুন।
- বাচ্চা খেলনা থেকে নোংরা সব কিছু হাতে ও মুখে দেয়।তাই ওর খেলা জীবাণু মুক্ত রাখুন। বারে বারে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিন।
- বাচ্চাদের ডাস্ট এলাৰ্জি হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি হয়। ডাস্ট এলাৰ্জি থেকেও হাঁচি কাশি হয়। তাই বাচ্চার ডাস্ট এলাৰ্জি থাকলে বাচ্চাকে ডাস্ট থেকে দূরে রাখুন।
- বাচ্চাকে সঠিক পুষ্টি যুক্ত খাবার দিন। যাতে ওর ইমিউনিটি মজবুত হয়। বাচ্চাকে সবুজ শাক সবজি ,লাল ও হলুদ সবজি(টোমেটো,লাল বেল পেপার ,গাজর ,কুমড়ো ) বেশি করে খাওয়ান।
- বাচ্চাকে ছোট থেকেই কেশে কফ তোলা ও নাক থেকে সর্দি বের করার ট্রেনিং দিন। যত তাড়াতাড়ি বাচ্চা শিখবে তত ভালো।
৬ মাসের কম বয়সী বাচ্চার সর্দি কাশি হলে কি করণীয়(Home remedies for cough and cold for babies aged below 6 months in Bengali )
ব্রেস্ট মিল্ক
বাচ্চার যদি ৬ মাসের নিচে(নবজাতক শিশুর সর্দি) হয় তো ব্রেস্ট মিল্কের চেয়ে ভালো কিছু হতে পারেনা। এমনকি ৬ মাসের বেশি বাচ্চাদের জন্য ও বেস্টমিল্ক সবচেয়ে ভালো। বাচ্চার শরীরে এই সময় তরলের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই বাচ্চাকে যত টা পারেন ব্রেস্টমিল্ক ফীড করান।যেকোনো ধরনের সর্দি কাশির জন্য বেস্টমিল্ক বেস্ট।
সর্ষের তেলের মালিশ
এই টোটকা টা আশাকরি সব মায়েরাই জানেন। ২ চামচ সর্ষের তেল ,১/৪ চামচ কালোজিরে ও ২ কোয়া রসুন একসাথে মিশিতে গরম করে নিন। একদম হালকা উষ্ণ অবস্থায় বাচ্চার বুকে ,পিঠে ,হাতের তালু ও তল পায়ে মালিশ করুন। বাচ্চার ঠান্ডা সর্দি কাশি হলে এটি ট্রাই করুন। শুকনো কাশিতে করবেন না।
নাজাল ড্রপ
যদি বাচ্চার নাক যদি সর্দিতে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে নাসাল ড্রপ ব্যাবহার করুন। কোন নাসাল ড্রপ ব্যাবহার করবেন ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করুন। বা আপনি ওষুধ দোকানেও বাচ্চাদের জন্য স্পেশালি যে নাজাল ড্রপ পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি বাড়িতেও নাজাল ড্রপ তৈরী করতে পারেন।
১ কাপ জলে ১/২ চা চামচ নুন দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। যে পাত্রে এই গরম জল রাখবেন সেই পাত্র ও ড্রপার সবকিছু কিন্তু ভালো করে গরম জলে ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করে নেবেন।ঠান্ডা হয়ে গেলে ড্রপারের সাহায্যে ২ থেকে ৩ ফোটা করে প্রতিটি নাকের ফুটোতে দিন। নাকে দেওয়ার সময় বাচ্চার মাথাকে উঁচু করে ধরে রাখুন যাতে নাক দিয়ে খুব ভেতরে বা মুখে না চলে যায় ও সর্দি তরল হয়ে সহজেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।
ঘরের আদ্রতা বাড়ান
বিশেষ করে বাচ্চার শুকনো কাশি হলে ঘরের আদ্রতা বৃদ্ধি বেশ হেল্পফুল হয়। এর জন্য আপনি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা জল গরম করে একটি বড়ো উম্মুক্ত পাত্রে ঢেলে দিন।ও বাচ্চাকে পাত্রের কাছে নিয়ে যান। খুব কাছে নয় ,নাহলে বাচ্চার গায়ে গরম লেগে যেতে পারে। গরম জল বাষ্পের আকারে নির্গত হবে ও ঘরের আদ্রতা বাড়াবে। এই উপায় টি যে কোনো বয়সের বাচ্চার জন্য উপকারী
সর্দি বের করার জন্য বাল্ব সিরিঞ্জ ব্যাবহার করুন
বাচ্চার সর্দিতে নাক বন্ধ থাকলে ঘুমোতে কষ্ট হয় ,বার বার জেগে ওঠে। সাকশান এর সাহায্যে বাচ্চার নাকের সর্দি বের করে দিন ,এতে বাচ্চার নিঃশাস নিতে সুবিধে হবে ,ও বাচ্চা শান্তিতে ঘুমোবে।
বাচ্চার বয়স ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে হলে(Home remedies cough and cold for children aged between 6 months to 1 year in Bengali )
বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয় তাহলে ওপরে বলা সবকটি উপায় অবলম্বন করুন।এছাড়া বাচ্চার খাওয়ারে যদি আদা যোগ করা শুরু করেছেন ,তাহলে নিচের ঘরোয়া উপায় টিও ট্রাই করে দেখুন।
আদা চা
শুনতে চা হলেও মোটেও এতে কোনো চা পাতা নেই। ১ কাপ জলে ১/৪ ইঞ্চি আদা ও কয়েকটি তুলসি পাতা যোগ করুন ও ফুটিয়ে নিন। একটি জীবাণু মুক্ত চোখের সাহায্যে ৩ থেকে ৪ চামচ খাইয়ে দিন। দিনে ২ বার মতো এই আদা তুলসীর চা দিন।
সর্ষের তেলের মালিশ
একটি পাত্রে সর্ষের তেল ,তুলসী পাতা ,পান পাতা দিন। ভালো করে গরম করে নিন ও স্টোভ বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। ঈষৎ উষ্ণ অবস্থায় এলে বাচ্চার বুকে ,পিঠে ,পায়ের তল ,হাতের তালুতে মালিশ করে দিন।
চিকেন সুপ
বাচ্চা যদি চিকেন খেতে শুরু করেছে তাহলে ওকে উষ্ণ গরম চিকেন স্যুপ খেতে দিন। সবজি ও চিকেন যুক্ত এই স্যুপ বিভিন্ন নিউট্রিশনে ভরপুর যা আপনার ছোট্ট বেবিকে সর্দির ইনফেকশন ও জীবাণু দের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করবে। বেবিকে জলদি সরিয়ে তুলতে হেল্প করবে। তাছাড়া গরম স্যুপ নাক ও গলায় বসা সর্দিকে তরল করে বের করতে সাহায্য করে। বাচ্চা যদি চিবোতে না শেখে তাহলে পিউরি করে খাওয়ান অথবা শুধু স্যুপের জল টুকু খাওয়ান।
বাচ্চার বয়স ১ বছরের বেশি হলে (Home remedies cough and cold for children aged above 1 year )
মধু
বাচ্চা ১ বছরের বেশি হলে বাচ্চাকে সকালে মধু খাওয়ান। আমরা জানি যে মধু এন্টিব্যাকটেরিয়াল। অনেক রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে ও ইমিউন রেসপন্স বাড়িয়ে তোলে।
মধুর চা বানিয়েও খাওয়াতে পারেন। এক কাপ জলে ১ চামচ মধু,১/২ ইঞ্চি আদা ,একটি গোলমরিচ ,৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা দিন ও ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হতে দিন। ঈষৎ উষ্ণ অবস্থায় এলে এতে ১/২ চামচ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন ও বাচ্চাকে খাইয়ে দিন। এটি দিনের বেলায় যে কোনো টাইমে বাচ্চাকে দিতে পারেন।দিনে ২ বার এই মধু চা ৪ থেকে ৫ চামচ খাওয়ান।
গুড়
বাচ্চার খুব কাশি হলে গলা ব্যাথা হয়ে যায়।কোনো কিছু খেতেও খুব কষ্ট হয়।একটি কড়াই তে একটুকরো গুড় নিন। ১/৪ ইঞ্চি আদা দিন ও গরম করে নিন। ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হলে বাচ্চাকে সারাদিন একটু একটু করে খেতে দিন। এতে বাচ্চার গলায় আরাম হবে।
দুধ ও হলুদ
বাচ্চাকে গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ান। হলুদ শরীরে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুদের ধ্বংস করতে সাহায্য করে। গরম দুধ জমে থাকা সর্দি তরল করতে সাহায্য করে ও শরীরে পর্যাপ্ত নিউট্রিশন দেয়। শরীরে তরলের যোগান দেয়।
বাচ্চাকে তরল জাতীয় খাওয়ার খাওয়ান
বাচ্চা এই সময় খুব ঘ্যানঘেনে হয়ে যায়। কিছুই খেতে চায়না।বাচ্চাকে পাতলা খিচুড়ি ,চিকেন স্যুপ ,ভেজিট্যাবল স্যুপ এসব খেতে দিন। এসব বাচ্চার খেতেও সুবিধে হবে ও শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবে।
টক জাতীয় ফল
বাচ্চাকে টক জাতীয় ফলের রস খাওয়ান। ত্বক জাতীয় ফলে থাকে ভিটামিনC যা শরীরে ইনফেকশনের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি বাচ্চার ঠান্ডায় গলা ব্যাথা থাকে,খুব জ্বর থাকে তাহলে কিন্তু টক ফল খাওয়াবেন না।
বাচ্চার বয়স যদি ২ বছরের বেশি হয় তাহলে বিভিন্ন ভেপার-রাব যেমন Vicks BabyRub মালিশ করতে পারেন।
এছাড়া আগে যেমন বলেছি বাচ্চার শুকনো সর্দি কাশি হলে ঘরের আদ্রতা বজায় রাখুন।
বাচ্চা যদি গার্গেল করতে শিখেছে তো গার্গেল করান।জলে নুন ও আদা মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন ও ঠান্ডা হতে দিন। ঈষৎ উষ্ণ অবস্থায় এলে গার্গেল করতে দিন।
বাচ্চার বয়স যতই হোক না কেনো বাচ্চাকে প্রপার রেস্ট দিন। বাচ্চাকে যত খুশি ঘুমোতে দিন। ঘুম বাচ্চার শরীর কে আরাম দেবে,তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে সাহায্য করবে ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হেল্প করবে।
কিছু টিপস
- ছোটো বাচ্চাদের সর্দি কাশি প্রায়শই হয়ে থাকে ,এনিয়ে ঘাবড়ে যাবেন না।
- সন্ধ্যের পর থেকে বিশেষ করে রাতের দিকে বাচ্চাদের কষ্ট বেড়ে যায়। তাই হাতের কাছে সব ধরনের টোটকা বা উপায় রেডি করে রাখুন।
- বাচ্চাকে কোনো ফ্রিজের খাবার বা ঠান্ডা খাবার দেবেন না।
- অনেক সময় অনেক ন্যাচারাল জিনিসেও এলাৰ্জি হতে পারে। তাই বাচ্চার এলাৰ্জি আছে এরম কোনো খাবার বা টোটকা দেবেন না।
- শিশুর যদি সর্দির সাথে গায়ে খুব জ্বর থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- সর্দি কাশি যদি ৬-৮দিনের বেশি দিন হয়ে থাকে তাহলে সত্বর ডাক্তার দেখান।
- যদি বাচ্চার সর্দি কাশি এমন হয় যে বাচ্চা একদম নিঃশাস নিতে পারছে না বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সত্ত্বর ডাক্তার দেখান।
শেষকথা
এই প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে ও কাজে লেগে থাকে তাহলে এখনই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন, লাইক করুন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল সবার আগে পেতে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন। আপনার একটা শেয়ার ,একটা লাইক নতুন কিছু লিখতে উৎসাহ যোগাবে। আমাদের এই ব্লগটিকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য যদি আপনার কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই সাজেস্ট করুন । এই বিষয়ে আপনার মতামত, সাজেশান বা কিছু প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান।
image credit macrovector/freepik
wirestock/freepik, pch.vector/freepik , Racoolstudio /freepik