শিশুদের কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়।। Home remedies to relieve constipation in babies in Bengali

শিশুদের কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়।। Home remedies to relieve constipation in babies in Bengali 

relieve constipation in babies


শিশুর কোষ্ঠ কাঠিন্য মা বাবার কাছে খুবই চিন্তার বিষয়।আপনার শিশুর বয়স যদি ১ বছরের কম হয় তাহলে শিশুর মাঝে সাঝে বেস কয়েক দিনের জন্য পটি না হওয়া খুবই সাধারন ব্যাপার।যে সব শিশুদের  বয়স ৬ মাসের কম ও শুধুমাত্র ব্রেস্ট ফিড করে সেই সব শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রায় কোনো সময় হয়না। ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশুদের মাঝে সাঝে পটি করতে কষ্ট হতে পারে।আর শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের বেশী হয় ও কঠিন খাবার খেতে শুরু করেছে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যেহেতু  শিশুরা সবে শক্ত খাবার খেতে শুরু করেছে তাই ৬ থেকে ৯ মাস অবধি শিশুরা পটি করার সময় কাদঁবেই, এটা খুবই স্বাভাবিক।এর পর থেকে ধীরে ধীরে নতুন খাদ্যাভ্যাসের সাথে অভস্থ্য হয়ে যাবে।
  

কয়েক দিন বাদে পটি করা মানেই কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়(Pooping after few days does not mean constipation)

৬ মাসের কম বয়সী শিশু যারা শুধু ব্রেস্ট ফিড করে তারা অনেক সময় বেশ কিছু দিন বাদে বাদে পটি করে।এই সব শিশুরা ১০ দিন পর্যন্ত অনেক সময় পটি করে না।তার মানেই কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়। ব্রেস্ট মিল্ক এতটাই পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ যে শরীর প্রায় সবই শোষণ করে ফেলে,ফলে বর্জ্য পদার্থ খুবই কম উৎপন্ন হয়।
৬ মাসের কম বয়সী শিশু যারা ফর্মুলা মিল্ক খায় তারা দিনে হয়ত ৩ থেকে ৪ বার পটি করে।মাঝে মাঝে কয়েকদিন দিন বাদেও পটি করে।
৬ মাসের বেশী বয়সী শিশুরা যারা কঠিন খাবার খেতে শুরু করেছে তারাও মাঝে মাঝে কিছু দিন বাদে পটি করতে পারে। পটি যদি নরম হয় ও শিশুর পটি করতে কোন কষ্ট না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে কোষ্ঠকাঠিন্য নেই সবকিছুই স্বাভাবিক আছে।

কখন বুঝবেন যে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য আছে(How will you know that your baby is constipated?)

কোষ্ঠকাঠিন্য আসলে শিশু কতদিন ছাড়া পটি করছে তার ওপর নির্ভর করেনা, নির্ভর করে শিশুর পটি কতোটা শক্ত হচ্ছে তার ওপর। শিশুর পটি যদি নরম ও জলীয় হয় এবং মোটামুটি গড়ে ৩ থেকে ৪ দিন অন্তর পটি করে তাহলে বুঝতে হবে যে সুস্থই আছে।কিন্তু যদি
  • পটি খুব শক্ত হয় অনেকটা শক্ত কাদা মাটির মত।
  • শিশু পটি করার সময় খুব কান্নাকাটি করে।
  • শিশু গন্ধ যুক্ত বাতাস নির্গত করে
  • পেটে ব্যাথা হয় ফলে কাঁদে
  • শিশুর পেট শক্ত হয়ে থাকে
  • পটিতে রক্তের ছিটে
  • একদমই খিদে থাকেনা
তাহলে বুঝতে হবে যে তার কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়েছে।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সারানোর কিছু ঘরোয়া টিপস(Home remedies to relief constipation in babies)

ডায়েট পরিবর্তন করুন(Change diet to cure constipation in babies)

শিশু যদি শুধুমাত্র ব্রেস্ত মিল্ক খায় তাহলে তার কোষ্ঠ কাঠিন্য প্রায় হয়না। তবুও যদি হয় তাহলে মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। কিছু খাদ্য হয়ত বাচ্চার সহ্য হচ্ছেনা যেমন গরুর দুধ।তবে আপনাকে বার বার ট্রাই করে দেখতে হবে যে আপনি কোন খাওার খেলে বাচ্চার কোষ্ঠ কাঠিন্য হচ্ছে।দারকার পড়লে একটি ডায়রিতে লিখে রাখুন যে কোন খাবার খাচ্ছেন আর কোনটা বাদ দিচ্ছেন।এভাবে বুঝতে সুবিধে হবে যে আপনার খাওয়া কোন খাবার টা শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারন।
যে সব শিশুরা ফর্মুলা খায় তাদের পটি ব্রেস্ত ফিড করা শিশুদের থেকে শক্ত হয়। এই সব শিশুর যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে যে ফর্মুলা দুধ খাওয়ান সেটা বাদ দিয়ে অন্য কোন ফর্মুলা ট্রাই করে দেখতে পারেন।তবে কোনোভাবেই ১ বছরের আগে শিশুকে গরুর দুধ খাওয়াবেন না। গরুর দুধ শিশুদের কনস্টিপেশন( Constipation in babies due to cow milk) ও র‍্যাশের কারণ হতে পারে।
আপনার শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের বেশী হয় ও সে শক্ত খাবার খেতে(Constipation in babies after introducing solids) শুরু করেছে তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া খুব স্বাভাবিক। 
    
কোষ্ঠ কাঠিন্য হলে অতিরিক্ত শ্বেতসার বা স্টার্চ যুক্ত খাওয়ার যেমন ভাত,সাদা পাউরুটি, আলু(foods that causes constipation in babies in Bengali) শিশুকে না দেওয়াই ভাল।এমনকি কিছু ফল ও সব্জি যেমন গাজর সেদ্ধ ,আপেল সেদ্ধ, কলা, এসবও কোষ্ঠ কাঠিন্যের কারন হতে পারে। শিশুকে এসবের পরিবর্তে ফাইবার যুক্ত খাওয়ার যেমন গমের রুটি, অটস, কুমড়ো সেদ্ধ ,মটরশুঁটি সেদ্ধ, বিনস সেদ্ধ, রাঙ্গা আলু সেদ্ধ নাশপাতি সেদ্ধ ,ব্রকলি সেদ্ধ(Foods and purees to relief constipation in babies in bangla) এসব খাওয়ান।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি ৬ মাসের বেশি বয়স হলেই অনেকে শিশুকে কৌটোর খাবার, কৌটোর দুধ , সেরেলাক এই সব খাওয়াতে শুরু করেন। যদি আপনার ব্রেস্ট মিল্ক থাকে তো শিশুকে ব্রেস্ট মিল্কই খাওয়ান। কারণ এই সব কৌটোর খাবার শিশুদের কোষ্ঠ কাঠিন্যের অন্যতম কারণ।আর্টিফিসিয়াল পদ্ধতিতে এই সব খাবার বানানো হয় তাই এই সব খাবার শিশু দের হজম ক্ষমতার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। 

ফলের রস ও জল খাওয়ান(Try fruit juice and water to soften the stool in babies)

শিশু যদি ৬ মাসের বেশী বয়সী হয় তাহলে তাকে আপেলের রস, আঙুরের রস, নাশপাতির রস, খাওয়াতে পারেন।এই সব ফলের রসে সরবিটাল নামে এক মিষ্টি পদার্থ থাকে যা শিশুরা হজম করতে পারেনা কিন্তু এই সরবিটাল এক্সট্রা জল ধরে শিশুর পটি কে নরম করতে সাহায্য করে।
শিশু যদি ৬ মাসের বেশী হয় তাহলে তাকে সারাদিন অল্প অল্প করে জল খাওয়াতে পারেন। মনে রাখবেন ১ বছরের আগে শিশুর কিডনির গঠন সম্পূর্ণ হয়না তাই তাকে অতিরিক্ত জল খাওাবেন না।
ব্যায়াম করান(Little exercise can ease constipation in babies)
শিশুকে হাল্কা ব্যাম করালে শিশুর হজম ভাল হয় ও পটি করতে সুবিধে হয়। শিশুর পা দুটি সাইকেল চালানোর মত করে ১০ বার মত ঘোরান। শিশুর পা দুটোকে ভাজ করে পেটের ওপর নিয়ে গিয়ে হাল্কা চাপ দিন, ২ সেকেন্ড মত ধরে রাখুন তারপর আবার পা দুটি কে সোজা করুন।এরকম ৫ বার করুন। সারাদিনে এই দুটি ব্যায়াম ৬ থেকে ৭ বার করুন। মনে রাখবেন শিশুর ওপর বেশী জোর দেবেন না।
  
হাল্কা গরম জলে স্নান করান(Warm bath can help your baby to poop)
হাল্কা গরম জলে স্নান করালে পায়ুর পেশি শিথিল হয় ফলে শিশু পটি করতে সুবিধে হয়। অনেক সময় শিশু স্নানের সময় জলেই পটি করতে পারে তার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
শিশুর পেট মালিশ করুন(A gentle massage can relieve your baby’s constipation)
 শিশুর পেটে হাল্কা চাপ দিয়ে মালিশ শিশুকে পটি করতে সাহায্য করে। নাভির চারপাশে ২ টো আঙ্গুল দিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে গোল গোল করে ঘোরান।
পাঁজরের নিচ থেকে শুরু করে পেটের নিচ পর্যন্ত ৩ টে আঙ্গুল দিয়ে হাল্কা করে চাপ দিয়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ বার ঘষুন।
সারাদিন এই দুটো মালিশ ৫ বার মত করুন।
খুবই কম বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোষ্ঠ কাঠিন্য শিশুর শরীরে কোন রোগের জন্য হচ্ছে। শিশুর যদি হাইপারথাইরয়েডিজম বা হিরসস্পারং ডিজিজ বা এই জাতিয় কোন রোগ থাকে তাহলে কোষ্ঠ কাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
ওপরের বলা ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ট্রাই করে দেখুন। যদি না কোষ্ঠ কাঠিন্য ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে না সারে তাহলে সত্বর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
 
এই প্রতিবেদন টি যদি ভালো লেগে থাকে ও কাজে লেগে থাকে তাহলে এক্ষুনি অন্য মায়েদের সাথে শেয়ার করুন। 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
  
x

Recommended Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.