শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় || 9 simple natural tips to make your baby’s skin glowing in Bengali

শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় || 9 simple natural tips to make your baby’s skin glowing in Bengali

baby skin whitening Bengali

প্রত্যেক মায়ের কাছে তার শিশুই হল সবচেয়ে সুন্দর।মা হওয়ার পর সব মায়েরাই তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে সুন্দর টাই চায় । তা  সে সুন্দর পোশাক হোক বা  সুন্দর ত্বক(baby’s skin glowing in Bengali)। আমরা বড়রাই নিজেদের ত্বক সুন্দর করার জন্য কত কিছুই না করি,তবে শিশুর জন্য কেন নয়? কিন্তু মনে রাখতে হবে আপনার ছোট্ট সোনার ত্বক খুবই পাতলা ও স্পর্শকাতর।তাই তার ত্বকের পরিচর্যার(Baby skin care) নিয়মও  আলাদা।তার এই কোমল ত্বকের যত্ন নিতে হবে খুবই সাবধানে।

ত্বকের রঙের আসল রহস্য (Secret behind skin colour)

শিশুদের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনুন গ্রেট ডিল 🤑%❤

 আমাদের মা ঠাকুমারা বলে থাকেন যে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বাদাম, কেশর ইত্যাদি খেলে নাকি শিশুর ত্বক ফর্সা হবে(Baby whitening)।কিন্তু এসবই কথার কথা। শিশুর ত্বক কেমন হবে তা নির্ভর করে মা বাবার ত্বকের ওপর । মা বাবার জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় সে জন্মের পর কেমন ত্বকের আধিকারি হবে।তাছাড়া  ত্বকে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের পরিমান বেশি বা কম হলে ত্বকের উজ্জলতা কমে বা বাড়ে।  তাই এসব খেলে আপনার শরীর ভাল থাকবে আপনি সুস্থ থাকবেন। মা  সুস্থ থাকলে তবেই তো  সুস্থ সন্তানের জন্ম হবে। কিন্তু এসব খেয়ে  কোনভাবেই শিশুর ত্বকের রঙ আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। যেটা করতে পারবেন তা হল শিশুর ত্বক উজ্জল করা ( Improve baby’s skin tone)। সেজন্য আপনাকে শিশুর ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে হবে। ত্বক যত সুস্থ থাকবে  ততই তা দেখতে সুন্দর লাগবে। তাই নীচে রইল কিছু টিপস ও ঘরোয়া পদ্ধতি আপনার শিশুর কোমল ত্বকের জন্য।(9 simple natural tips to make your baby’s skin glowing in Bengali)

baby skin fair massage Bengali

উষ্ণ তেল মালিশ(Hot oil massage)

তেল মালিশ তো আমরা মায়েরা করেই থাকি কিন্তু তেল হালকা গরম করে নিলে তা চমৎকারী হয়। গ্রীষ্ম কালে  আমন্ড অয়েল ,অলিভ অয়েল আর শীতকালে নারকেল তেল ব্যাবহার করা ভাল। এছাড়া শিশুর র‍্যাশ মুক্ত উজ্জ্বল ত্বকের জন্য বাজারে অনেক তেল কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোও ব্যাবহার করতে পারেন। তবে তেল মাখানোর ১৫ মিনিট পর শিশু কে স্নান করিয়ে দেবেন।কারন ত্বক যে পরিমান তেল শুষে নিতে পারে তা ১৫ মিনিটেই হয়ে যায়।এর চেয়ে বেশি সময় রাখলে অতিরিক্ত ধুলো বালি জমে শিশুর ত্বক নোংরা করে ফেলবে।

 উষ্ণ তেল মালিশ শিশুর ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল ধরে রাখতে সাহায্য করে।ত্বকের রক্ষাকারী আবরণ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা, ও টান টান ভাব বজায় রাখতে তেল মালিশের বিকল্প হয়না। আর তেল মালিশের ফলে শিশুর ঘুমও খুব ভাল হয়। শিশুর 

স্নানের জলের সঠিক তাপমাত্রা(Right temperature for bathing)

শিশুকে খুব ঠাণ্ডা বা খুব গরম জলে স্নান করানো উচিৎ নয়।খুব গরম শিশুর নরম ত্বক পুড়িয়ে ফেলতে পারে আবার খুব ঠাণ্ডা জল শিশুর জন্য মটেই আরামদায়ক নয়।তাই জল যেন হাল্কা গারম হয়।  জলের তাপমাত্রা ৩৭° সেলসিয়াস শিশুর জন্য আদর্শ ।জলের তাপমাত্রা দেখার জন্য নিজের কনুই বা কব্জি ডুবিয়ে দেখে নিন জল কাতটা গরম। আর স্নানের সময় সংক্ষিপ্ত রাখুন। ৫ মিনিটের স্নান আপনার ছোট্ট সোনার জন্য যথেষ্ট।

আরো পড়ুন স্ট্রেচ মার্কস দূরীকরণের ঘরোয়া উপায়

মশ্চারাইজার  ব্যবহার করুন(Must use moisturizer)

স্নানের পর শিশুর ত্বক আর্দ্র থাকা অবস্থাতেই মশ্চারাইজার লাগিয়ে দিন। ত্বক শুকিয়ে  গেলে ত্বকের নিজস্ব ন্যাচারাল  অয়েলও শুকিয়ে যাবে ফলে এরপর মশ্চারাইজার ব্যাবহারে লাভ হবে না। দিনে অন্তত ২ থেকে ৩ বার মশ্চারাইজার লাগান।

শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূরীকরণ (Remove unwanted hair)

জন্মের পর শিশুদের শারীরে ও মুখে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। এর কারনেও শিশুর ত্বক অনুজ্জ্বল লাগে।তাই এই লোম দূরীকরণ এর জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ করতে পারেন।

টোটকা ১ – একটি পাউরুটি নিন।পাউরুটির চারপাশের শক্ত অংশগুলি কেটে বাদ দিন। মাঝের সাদা অংশের সাথে ২চামচ দুধের সর ভাল করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। শিশুর স্নানের ১৫ মিনিট আগে এটি হাল্কা হাতে ঘষে মাখিয়ে দিন। পাউরুটির গুঁড়ো হাল্কা স্ক্রাবারের কাজ করে।দুধের সর প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জারের কাজ করে।(Homemade ubtan)

টোটকা ২– ২চামচ আটা ও এক চামচ ময়দা নিয়ে শক্ত গোলা বানিয়ে নিন।স্নানের আগে শিশুকে তেল মাখানোর ১৫ মিনিট পর এই গোলা দিয়ে শিশুর শরীরের যেসব স্থানে লোমের পরিমান বেশি সেসব স্থানে গোল গোল করে ঘসুন ।এর পর শিশুকে স্নান করিয়ে দিন।

বডি প্যাকের ব্যাবহার(Use homemade body pack)

১ চামচ বেসন,এক টুকরো  হলুদ  ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট করে শিশুকে মাখিয়ে দিন। ৩ মিনিট রেখে স্নান করিয়ে দিন। এছাড়া চন্দন, কেশর, ও গোলাপ জল মিশিয়ে মাখাতে পারেন। মনে রাখবেন বেসন বা চন্দন মাখানোর পর শুকিয়ে গেলে তা ত্বকে টানের সৃষ্টি করে যা ত্বকের ক্ষতি করে। তাই এই সব প্যাক মাখনোর পর শুকনোর আগেই শিশু কে স্নান করিয়ে দিন। ১৫ দিনে একবার এই প্যাক ব্যবহার করা ভাল(baby fairness pack)।

আরো পড়ুন বুকের দুধ বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়

শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন(Keep your baby hydrate)

শিশুর শারীরে আদ্রতা কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে ,তাই দেখতে ফ্যাকাসে লাগবে।তাই শিশুকে পরিমান মত জল খাওয়ান।শিশুর বয়স ৬ মাসের বেশি হলে তবেই জল খাওয়ানো শুরু করবেন। কতটা পরিমান জল খাওয়াবেন তা ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে নেওয়াই ভাল। আর যদি আপনার শিশুর বয়স ৬ মাসের চেয়ে কম হয় তাহলে তাকে জল খাওয়াবেন না। ২ ঘণ্টা অন্তর ব্রেস্ট ফীড করানই যথেষ্ট।

baby skin glow fruit sap Bengali
 

ফলের রস খাওয়ান(Fruit Sap)

শিশুর বয়স ৬ মাসের বেশি হলে তাকে ভিটামিন-C যুক্ত ফল যেমন কমলা লেবু ,আঙ্গুর বা আপেলের রস খাওয়াতে পারেন (খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন)।ফলের রস ভেতর থেকে শিশুর ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে(make baby’s skin fair)। 

আরো পড়ুন একই স্থানে বার বার ফোঁড়া কেন হয় 

রৌদ্র স্নান(Mild Sun bath is good)

সাত সকালের রদ্দুর শিশুর শারীরে ভিটামিন D তৈরি করে যা শিশুর বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ । এছাড়া বিভিন্ন চর্মরোগ ও খোসপাঁজরা থেকে শিশুর ত্বককে রক্ষ্যা করে। সকাল ৮ টার আগে ৫ মিনিটের রদ্দুরই যথেষ্ট। তবে খেয়াল রাখবেন শিশুর মাথায় যেন কোন ভাবে রদ্দুর না লাগে(৭ মাসের শিশুর যত্ন )।

সাবান কে না বলুন(Say no to Soap)

 শিশুর ত্বক পরিস্কার করার জন্য কখনই সাবান ব্যবহার করবেন না। সাবানে থাকা ক্যামিক্যাল শিশুর কোমল ত্বকের জন্য মটেই উপযুক্ত নয় তা সে যত ভাল সাবান ই হোক। এর পরিবর্তে বেসন দিয়ে তৈরি ঘরে বানানো প্যাক ব্যাবহার করুন(৬ মাসের শিশুর যত্ন )।

কিছু সতর্কতা(Some Precautions)

  • শিশুর ত্বক সবসময় হাল্কা হাতে যত্ন করুন। ত্বকে অজথা জোরে ঘষাঘষি বা টানাটানি করবেন না ।স্নানের পর শিশুর গায়ের জল তোয়ালে দিয়ে হাল্কা করে চেপে চেপে ভাল করে মুছে ফেলুন।গায়ের জল গায়ে  শুকোতে দেবেন না।
  • শিশুকে হাল্কা ও খোলামেলা নরম সুতির পোশাক পরান। অতিরিক্ত ভারী ও আঁটসাঁট পোশাক পরাবেন না।
  • যখন যেমন মরসুম সে অনুযায়ী ত্বকের যত্নের রুটিন পরিবর্তন করুন।
  • মনে রাখবেন বড় দের জন্য তৈরি কোন ক্রিম বা প্রসাধনী শিশুদের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।
  • যে কোন টোটকা বা বডি প্যাক ব্যবহারের  আগে শিশুর কনুই বা কানের পেছনে একটুখানি  লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে নিন। যদি এলাৰ্জি হয় তাহলে ওই প্যাক ব্যাবহার করবেন না।
  • যেই টোটকা বা প্যাক ব্যাবহার করুন না কেন শিশুর বয়স ৩ মাস হওয়া অব্দি অপেক্ষা করুন।একদম সদ্দ্যজাত শিশুর শরীরে কোনো প্যাক ব্যাবহার করবেন না। 
  • যে কোন রকম ত্বকের সমস্যা দেখা দিলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা(Conclusion)

 জন্মাবার পর শিশুর ত্বকের আসল রঙ ফুটে উঠতে ১ বছর সময় লাগে। সঠিক সময়ে ত্বকের পরিচর্যা শুরু করলে তা আপনার শিশুর জন্যই ভাল।ত্বক পরিচর্যার জন্য সবসময় প্রাকৃতিক উপায় বেছে নেওয়াই শ্রেষ্ঠ। শিশুর ত্বক যত কম কেমিক্যাল ব্যবহার করা যায় ততই ভালো।কথায় আছে প্রতিটি ত্বকই তার নিজ গুনে সুন্দর।তাই আপনার শিশুর ত্বক(baby colour)যেমনই হোক না কেন তাকে প্রশংসা করুন ,তার ত্বকের রঙকে ভালবাসুন।

Recommended Articles

1 Comment

  1. চমৎকার একটা লেখা।
    শিশুদের জন্য প্রাকৃতিক জিনিসপত্র বাজারের বিভিন্ন কোম্পানির প্রসাধনী’র থেকে ভাল যদিও আজকাল খাঁটি জিনিস পাওয়াও বেশ শক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published.