Best home remedies to increase breast milk production naturally in Bangla || বুকের দুধ বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়
আপনার সন্তান যদি বুকের দুধ খায় তাহলে প্রথমেই যে চিন্তাটা মাথায় আসে যে আমার সন্তান ঠিক মত দুধ পাচ্ছে তো, ওর পেট ভরছে তো?(How to increase breast milk supply)মা হওয়ার পর সন্তানের ভাল কি করে হবে সবসময় সে চিন্তাই মাথায় ঘোরে। শিশু দুধ পাচ্ছে কিনা তার সবচেয়ে ভাল প্রমান হল তার সঠিক ওজন বৃদ্ধি।বয়স অনুপাতে যদি তার ওজন সঠিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে সে ঠিক ঠাকই খাচ্ছে। এছাড়া শিশু যদি সারাদিনে ১৫ থেকে ২০ বার মত ইউরিন করে তাহলেও বুঝতে হবে যে তার পেট ভরছে।
এই সময় যেহেতু শিশু পুষ্টির জন্য সম্পূর্ণ ভাবে মায়ের ওপর নির্ভর করে তাই মাকে সঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। আপনি কি খাচ্ছেন কিভাবে নিজের যত্ন নিচ্ছেন তার ওপর বুকের দুধের উৎপাদনের পরিমান নির্ভর করে। ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদন নির্ভর করে প্রোল্যাক্টিন নামের হরমোনের ওপর। এছাড়া ক্যালসিয়াম যুক্ত খাওয়ারও ব্রেস্ট মিল্ক বৃদ্ধি করে। তাই মিল্ক বৃদ্ধির জন্য আপনাকে সেই সব খাওয়ার খেতে হবে যাতে শরীরে প্রোল্যাক্টিন ও ক্যলসিয়াম বৃদ্ধি পায়। তাই নীচে রইল বুকের দুধ বাড়ানোর মা ঠাকুমাদের দেওয়া কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি।
ব্রেস্ট মিল্ক বাড়ানোর জন্য যে সব খাদ্য আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে(foods to increase breast milk )
মেথি(Fenugreek to increase breast milk after Pregnancy)
মেথি প্রাচীনকাল থেকেই ব্রেস্ট মিল্ক বাড়ানোর জন্য ব্যাবহার হয়ে আসছে। মেথি তে রয়েছে ফাইটোইস্ট্রজেন যা প্রোল্যাক্টিন হরমনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে,ফলে ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
হাফ চামচ মেথি রাতে এক কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে দিন।সকালে উঠে খালি পেটে মেথি ভেজা জল খেয়ে ফেলুন।বাকি মেথি দানা গুলো রান্নায় ব্যবহার করে নিন। মেথি ৩ দিনের মধ্যেই মিল্কের উৎপাদন বাড়াতে পারে(Increase breast milk fast)। ভাল ফল পেতে এটি আপনাকে প্রতিদিন খেতে হবে।
সতর্কতাঃ যদি আপনার বাদাম বা ছোলা জাতীয় খাওয়ারে এলার্জি থাকে তবে মেথি খাবেন না। যদি লো ব্লাড সুগার থাকে তাহলেও মেথি খাবেন না।
মৌরি (Fennel to increase breast milk production)
মেথির মত মৌরিও দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।এছাড়া গ্যাস ও বদ হজমের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।মনে করা হয় যে মৌরির গুনাগুন ব্রেস্ট মিল্ক থেকে শিশুর শরীরে যায় ফলে শিশুর পেটে ব্যথা বা কলিকের সমস্যাতে উপশম হয়।
রাতের বেলা ১ চামচ মৌরি ও মিছরি ভিজিয়ে রেখে দিন। সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। এক দিন অন্তর আপনি এটা খেতে পারেন।
বাদামি ভাত(Brown rice to increase breast milk after Delivery)
নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে বাদামি চালের ভাত বা ব্রাউন রাইস খুবই উপাকারি।এই দানাশস্য টি মায়েদের শরীরে প্রোল্যাক্টিন বৃদ্ধি করে ব্রেস্ট মিল্কের জোগান বাড়ায়।গোটা শস্য হিসেবে বাদামি ভাতের উপকারিতা সাদা ভাতের চেয়ে অনেক বেশি। এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে যা প্রেগন্যান্সির পর ওজন কমাতে সাহায্য করে(increase breast milk after c-section in Bengali)। এছাড়া বাদামি ভাত বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন যিঙ্ক,আয়রন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদিতে ভরপুর।
তাই আজ থেকেই সাদা ভাতের পরিবর্তে বাদামি ভাত খওয়া শুরু করে দিন।সাদা ভাতের মতই এই ভাতের চাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে ফুটিয়ে নিন বা প্রেশার কুকারে ৭ থেকে ৮ টা সিটি দিয়ে নামিয়ে নিন।
আরো পড়ুন শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়
জিরা(Cumin can increase breast milk flow)
জিরা গ্যাস , অ্যাসিডিটি, কমাতে সাহায্য করে, এছাড়া হজম ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে ব্রেস্ট মিল্ক বাড়াতেও সাহায্য করে।হাফ চামচ গোটা জিরা জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর এই জল খেয়ে ফেলুন।দিনে ২ বার মতো এই জিরা ভেজা জল খান।
অথবা আপনি ১ চামচ জিরার সাথে হাফ চামচ মিছরি গুঁড়ো মিশিয়ে রেখে দিন। সারাদিনে এই মিশ্রণ একটু করে নিয়ে ৩ দফায় খেয়ে ফেলুন।
ওট্স (Oats to increase breast milk naturally)
ওট্স হল ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাওয়ার যা ব্রেস্ট মিল্কের পরিমান বাড়াতে খুবই কার্যকারী। সকালে বিভিন্ন ফল ও দুধ দিয়ে মাখা ওট্স খুবই উপাদেয় জলখাবার। এছাড়া ওটসের খিচুড়ি বানিয়েও খেতে পারেন।ওটসের খিচুড়ি বানানও সোজা,খেতেও বেস ভাল।এছাড়া বাজারে বিভিন্ন মসলা যুক্ত ভিন্ন স্বাদের ওট্স পাওয়া যায় সেগুলোও খেতে পারেন।
পেঁপে(Papaya to increase breast milk supply)
বুকের দুধ বাড়াতে এই হলুদ ফলটি খুবই সাহায্যকারী। পেঁপের মধ্যে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন A, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, আলফা ও বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া পেঁপে লিভার কে শক্তিশালী করে, হজম ক্ষমতা বাড়ায়।কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ করে বা তরকারি করে খেতে পারেন।আর পাকা পেঁপে সরাসরি বা ফলের স্যালাড বানিয়ে খেতে পারেন।
মুসুর ডাল(Red lentils to increase breast milk production)
ডালে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন , ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ইত্যাদি থাকে। তাই ডালকে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতেই হবে। প্রতিদিন আপনি যদি ডাল খান তাহলে ব্রেস্ট মিল্ক বৃদ্ধি পাবেই সাথে প্রেগন্যান্সির পর শরীর সুস্থ হওয়ার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুন একই স্থানে বার বার কেন ফোঁড়া হয়
আমন্ড বাদাম(Almonds to increase breast milk flow)
ব্রেস্ট মিল্ক বাড়াতে আমন্ড বাদামের জুড়ি মেলা ভার। আমন্ড বাদামে ট্রিপটোফেন নামে এসসেন্সিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে যা প্রোল্যাক্টিন বৃদ্ধি তে সহায়তা করে।আমন্ড বাদাম আমার নিজের ক্ষেত্রে খুবই উপকার দিয়েছে।প্রতিদিন রাতে ও সকালে একগ্লাস দুধের সাথে ১০ টি আমন্ড বাদাম ভিজিয়ে খান।৩ দিনের মধ্যেই ব্রে0স্ট মিল্কের জোগান বেড়ে যাবে।যদি আপনি দুধ খেতে না পারেন তাহলে১৫ টি আমন্ড বাদামরাতে ভিজিয়ে রাখুন সকালে ব্রেক ফাস্টের সাথে খেয়ে নিন।
আরো পড়ুন ৬ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা
সাবু দানা(Sago can increase breast milk supply after c-section)
সাগু দানাতে প্রোল্যাক্টিন বৃদ্ধি কারি উপাদান রয়েছে। সাবু দানা সেদ্ধ করে,পায়েস বানিয়ে বা খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। এটি শারীর কে ঠাণ্ডা রাখার সাথে সাথে শরীরের প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় জিঙ্ক ও শর্করার জোগান দেয়।আমার ক্ষেত্রে আমন্ডের মতোই সাবুদানাও খুব কাজে দিয়েছে।
বার্লি (Barely to increase breast milk after delivery)
বার্লি তে বিটা গ্লুকোন নামে ফাইবার রয়েছে যা প্রোল্যাক্টিনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদন বাড়ায়। বার্লি প্রেগন্যান্সির পর ওজন কমাতে সাহায্য করে ও কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রনে রাখে।এছাড়া বার্লি তে বিভিন্ন B ভিটামিন যেমন নিয়াসিন, থিয়ামিন ও ভিটামিন B-6 রয়েছে যা দুধের উৎপাদন ও গুনগত মান বৃদ্ধি করে।
সজনে ডাটা ও সজনে পাতা(Moringa can increase breast milk naturally)
সজনে পাতাতে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন রয়েছে। বিভিন্ন ভিটামিন যেমন বিটা ক্যারোটিন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন C, ভিটামিন E রয়েছে। এই সমস্ত উপাদানই ব্রেস্ট মিল্ক বাড়াতে সাহায্য করে।
জল(Must Drink water to increase breast milk supply)
ব্রেস্ট মিল্কের জোগান বাড়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জল।দুধের প্রায় ৮৮% জল থাকে।তাই মায়ের শরীরে জলের পরিমান কমে গেলে মিল্কের পরিমাণও কমে যেতে পারে।প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৪ লিটার জল আপনাকে খেতেই হবে। এছাড়া যে সব ফল বা সব্জি তে জলের পরিমান বেশি যেমন তরমুজ, শসা, সবুজ শাক সব্জি ইত্যাদি খেতে হবে।
আরো পড়ুন ৭ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা
ওপরে বলা খাওয়ার গুলি ছাড়াও আর কিছু খাওয়ার দেওয়া হল যা ব্রেস্ট মিল্কের জোগান বাড়াতে সাহায্য করে
১. ডাবের জল
২. বীট, গাজর
৩. রসুন
৪. তুলসি পাতা, কারী পাতা
৫. পোস্ত দানা
৬. সাদা ও কালো তিল
কিছু টিপস(Some tips that can help you to increase beast milk)
যখনই পারবেন শিশুকে ব্রেস্ট ফিড করান বা এক্সট্রা মিল্ক পাম্প (Breast pump)করে বের করে দিন
যত বেশি আপনি বাচ্চাকে ফিড করাবেন দুধের উৎপাদনও তত বাড়বে। প্রতি দেড় থেকে ২ ঘণ্টা অন্তর ব্রেস্ট ফীড করান এবং প্রত্যেক বারে দুটো ব্রেয়াস্ত থেকেই শিশুকে খাওয়াতে চেষ্টা করুন। কারন বাচ্চাদের যে কোন একটাই ব্রেস্ট থেকে খওয়ার অভ্যেস দেখা যায়।তাই যে ব্রেস্ট থেকে কম ফীড করবে সেটাতে মিল্কের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
দুশ্চিন্তা করবেন না(Stay away from Depression)
অতিরিক্ত ডিপ্রেশন শরীরে অক্সিটোসিনের পরিমান কমিয়ে দেয়। অক্সিটোসিন যা হ্যাপি হরমোন নামেও পরিচিত, প্রোল্যাক্টিনের সাথে এই হরমোনও ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই চিন্তা মুক্ত থাকুন, খুশি থাকুন।
সময় পেলেই ঘুমিয়ে নিন(Sleep whenever you can)
মা হওয়ার পর বাচ্চা নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে ঠিক মত ঘুম হয়না। ঘুম কম হলে শরীর ক্লান্ত থাকবে, অক্সিটোসিনের পরিমান কমে যাবে, ফলে ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদনও কমে যাবে।তাই শিশু যখনই ঘুমবে তখন আপনিও ঘুমিয়ে নিন। ঘুম ভাল হলে শরীর ফ্রেশ হবে, রিলাক্স হবে ফলে ব্রেস্ট মিল্কের পরিমাণও বাড়বে।
ক্লান্তি কাটাতে বাড়ির অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন(Ask for help from your family members)
বাড়ির কাজ বাড়ির বাকি সদস্য দের করতে বলুন, যাতে আপনি একটু বিশ্রাম পান, ও শিশুকে খাওয়ানো এবং যত্ন করার সময় পান।
এছাড়া বাজারে অনেক ধরনের ব্রেস্ট মিল্ক বাড়ানোর প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, সেগুলো খেয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু তার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই ভাল।
মনে হল উপকারী। প্রয়গ করে দেখতে হবে।