৮ মাস বয়সী শিশুর বাঙালি খাবারের তালিকা ।। 8 month baby food chart in Bengali for Bengali babies
দেখতে দেখতে আরো একমাস পেরিয়ে গেলো। আপনার ছোট্ট সোনা এখন ৮ মাসের। এখন সে সারা ঘরময় হামাগুড়ি দিতে আর নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে ব্যাস্ত। খাওয়াতে গেলে হাত দিয়ে হয়তো খাবার ঘাঁটছে আর ছড়িয়ে দিচ্ছে। খাওয়ানো কষ্টও হয়ে উঠেছে, কারণ সে হামাগুড়ি দিচ্ছে র আপনাকে তার পেছন পেছন দৌড়ে খাওয়াতে হচ্ছে 😄 . এটা খুবই স্বাভাবিক।এই সময় বেশির ভাগ শিশুদের এক দুটো দাঁত ওঠে। শিশুর হাতে কোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতাও বাড়ে। তাই এই সময়ই শিশুকে হাতে ধরে খাওয়া শেখানোর উপযুক্ত সময়। যেহেতু সে বড়ো হচ্ছে আর তার খেলাধুলো অনেক বেড়ে গেছে তাই তার ক্ষিদেও বাড়ছে। ৮ মাস বয়সে তাই আপনাকে তার খাদ্য তালিকায়(8 month baby food chart Indian ) আরো অনেক নতুন আইটেম যোগ করতে হবে।
খাওয়ানোর আগে কিছু টিপস মনে রাখুন(Tips to keep in mind before feeding )
- ৮ মাস বয়সে শিশু তার মাইলফলক গুলি (যেমন সোজা হয়ে বসা , হামাগুড়ি দেওয়া, শোয়া অবস্থায় রোল হওয়া বা উপুড় হওয়া ইত্যাদি ) অর্জিত করেছে কিনা লক্ষ্য করুন। যদি সে এখনো এগুলি অর্জন না করে থাকে তাহলেও ভয় বা চিন্তার কিছু নেই। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে শিখে নেবে।
- শিশুকে ব্রেস্ট মিল্ক বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো চালিয়ে যান।
- শিশুকে সর্বদা সদ্য প্রস্তুত , ভালো করে রান্না করা নরম খাবার দিন যাতে তার হজম ক্ষমতার ওপর চাপ না পড়ে ও হজম করতে সুবিধে হয় ।
- শিশুকে ভালো করে সোজা বসিয়ে খাওয়াবেন , শুইয়ে রেখে খাওয়াবেন না।
- শিশুকে এখন থেকে ধীরে ধীরে আমিষ জাতীয় খাবার দিতে শুরু করতে পারেন , কিন্তু আমিষ খাবার যেন সম্পূর্ণ ভালো ভাবে সেদ্ধ হয়।
- শিশুর খাবার তালিকাতে ভিন্ন স্বাদ ও রঙের খাবার যোগ করুন।
- যেকোন নতুন খাবার দেওয়ার পর ৩ দিন অপেক্ষা করুন।নতুন খাবার যোগ করলে কোনো কোনো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য বা লুজ মোশন দেখা দেয়। ভয় পাবেন না ,এটা খুবই স্বাভাবিক। যে খাবার থেকে এটা হচ্ছে সেটা কিছু দিনের জন্য বন্ধ রেখে পুনরায় খাওয়ার তালিকায় যোগ করতে চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন শিশুর কোষ্ঠ্য কাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি
- যদি কোনো খাবারে শিশুর এলার্জি হয় তাহলে সেই খাবার বন্ধ রাখুন ও স্বত্তর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- খাওয়ানোর আগে পাত্র গুলিকে জীবাণু মুক্ত করুন।
- বাচ্চার খাবারে নুন, চিনি, মধু মেশাবেন না। খাবার মিষ্টি করার জন্য অল্প খেজুর বার কিসমিস যোগ করতে পারেন।
- এক বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়াবেন না।
- খাওয়ানোর সময় বাচ্চা কে টিভি দেখিয়ে বা মোবাইল দেখিয়ে খাওয়াবেন না। নাহলে বাচ্চা এভাবেই খেতে অভস্থ্য হয়ে যাবে। টিভি বা মোবাইল বন্ধ থাকলে আর খেতে চাইবে না।
বেশিরভাগ শিশুদের এই সময় দাঁত ওঠে। তাই শিশুকে নিজের হাতে খেতে শেখানোর এটাই উপযুক্ত সময়।
শিশুকে কিভাবে নিজের হাতে খাবার খেতে শেখাবেন(How to Introduce Solid food to your baby)
- শিশুকে সবসময় বসিয়ে খাওয়াবেন। এতে খাওয়াতেও সুবিধে এবং গলায় লাগার ভয় ও থাকেনা।
- বাচ্চাকে বিভিন্ন স্বাদের ও রঙের খাবার দিন। এতে তার খাবার উৎসাহ বাড়ে।
- শিশুকে যেকোনো সেদ্ধ করা সবজির টুকরো যেমন গাজর , কুমড়ো , বিট ইত্যাদি ) বা ফলের টুকরো (যেমন আপেল , নাসপাতি, কলা ইত্যাদি )দিন । টুকরো গুলো এমন ভাবে কাটুন যেন সে হাতে ধরে খেতে পারে।
- বাচ্চাকে মুড়ি বা আঙুরের মতো ছোট টুকরো ও খেতে দিতে পারেন , এতে তার তর্জনী ও বুড়ো আঙুলের মধ্যে সমন্নয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- প্রথমে এক দুটো টুকরো খেতে দিন। ধীরে ধীরে এর পরিমান বাড়ান। হয়তো বাচ্চা কিছু কিছু খাবার খেতে চাইবে না। এতে চিন্তা করবেন না বা বাচ্চা কে জোর করবেন না। কিছুদিন পর আবার চেষ্টা করুন।
- তাড়াহুড়ো করে খাওয়াবেন না। যদি সে খাবার নিয়ে খেলতে চায় তাহলে সেটা করতে দিন। এভাবেই সে খবরের স্বাদ ও টেক্সচার বুঝতে শিখবে।
- বাচ্চাকে খেতে দিয়ে কখনো চলে যাবেন না। বাচ্চা যতক্ষণ খাচ্ছে তার কাছেই থাকুন।
- বাচ্চাকে চিপস,মিষ্টি, কেনা মিষ্টি পানীয়, কেনা ফলের জুস্ বা বাজার থেকে পক্রিয়াজাত যে কোনো খাবার একদম দেবেন না।
কী কী খাওয়ার এই মাসে শিশুর খাদ্য তালিকায় যোগ করবেন (Foods to be added in 8 months baby diet chart in Bengali)
শিশুকে প্রতিদিন কতটা খাওয়াবেন ( How much you can feed your 8 month old baby in a day )
শিশুকে প্রতিদিন কতটা পরিমানে খাওয়াবেন তার একটা নমুনা দেওয়া হোল। সব ধরনের খাবার এমন ভাবে খাওয়াবেন যেন সে প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমানে পায়। শিশু এই সময় ৩ বার প্রধান খাবার খায় তার সাথে ১ বার স্ন্যাক খায়। একদম টাইম ধরে খাওয়াতে হবে তার কোনো মানে নেই। বাচ্চার ক্ষিদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। ক্ষিদের সময় খাওয়ালে আপনার খাওয়ানো সফল হবার চান্স অনেক বেশি।
৮ মাসের শিশুর সাপ্তাহিক খাবার তালিকার নমুনা (8-month baby weekly food chart in Bengali)
১ বছরের আগে শিশুকে গরুর দুধ দেবেন না। কিন্তু পাস্তুরাইজ করা দুধের দই বা পনীর খাওয়াতে পারেন। প্রথমে ৪ -৫ চা চামচ পরিমান দিয়ে শুরু করুন ,ধীরে ধীরে এর পরিমান বাড়ান।
Week 3
শিশুর খাবার মানেই বোরিং ও স্বাদহীন হতে হবে মানে নেই। স্বাদ পরিবর্তনের জন্য ফলের স্মুদি ,ওটসের ছিল্লা এই সব দিতে পারেন। খাবারে অল্প পরিমান মসলা ভিন্ন স্বাদ এনে দিতে পারে। ধনে ,জিরে, মৌরি এই সব মসলা শিশুকে খাবার হজম করতেও সাহায্য করে। তাই খাবারে এক চিমটে মসলা যোগ করতেই পারেন।
Week 4
আরো পড়ুন প্রেগন্যান্সি স্ট্রেচ মার্কস কিভাবে দূর করবেন
চতুর্থ সপ্তাহে এসে ধীরে ধীরে শিশুদের মোটামুটি ভাবে পরিবারে যা রান্না হয় তাই দিতে শুরু করতে পারেন। তবে অবশ্যই ঝাল ও অতিরিক্ত তেল মসলা ছাড়া।
শেষ কথা (Conclusion)
আরো পড়ুন ৬ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা
১০ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা
১২ টি খাদ্য যা সন্তান ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রেগন্যান্ট হতে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রয়ী মাসীক কাল : ডায়েট ও জরুরী টিপস
শিশুকে যদি আমি খাবারের টুকরো দেই তাহলে তার গলায় বাধলে কি করবো, সে ক্ষেত্রে ত ভয় থাকে,কি করণীয়??